
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভুয়ো ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বীরভূমের নানুরে বিজেপি কর্মীকে গনধর্ষণ করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলার দেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে এবং তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এই ছবি টুইটারে শেয়ার করেছেন। টুইটের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “বীরভূমের নানুরে একজন বিজেপি কর্মীকে গনধর্ষণ করা হয়েছে। নানুরের পাকুরহাস থেকেও ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের খবর উঠে আসছে।“ এছাড়াও অনেক বিজেপি নেতা এই ছবিটিক বিভ্রান্তকর দাবির সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া সংবাদমাধ্যম “ইন্ডিয়া টুডে” সোশ্যাল মিডিয়ার এই দাবির ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। বীরভূমের এসপি নিজে জানিয়েছেন সম্প্রতি জেলায় ধর্ষণ বা নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, ২ মে বাংলার নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের খবর উঠে আসছে। বিভিন্ন ছবি, পোস্ট এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। তার মধ্যে কিছু সত্য ঘটনা হলেও বেশিরভাগই ভুয়ো। রাজনৈতিক নেতা এবং সাধারণ কর্মীরা তথ্য যাচাই না করে ভুল ঠিক না যাচাই করে ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ফলাফলে কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পাই, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের অফিসিয়াল টুইটার আইডি থেকে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন এই দাবি ভুয়ো।
এরপর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বীরভূম পুলিশের এসপি নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠি’র সাথে যোগাযোগ করে। তিনি প্রথমেই জানান, “বীরভূমে কোনও মহিলা ধর্ষণ বা গনধর্ষণ বা নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।“ এরপর তিনি বলেন, “এরকম কোনও ঘটনা ঘটলে থানায় মামলা দায়ের হত কিন্তু কোনও অভিযোগ করা হয়নি। নির্বাচনের পরে এরকম নৃশংস কোনও ঘটনার কোনও অভিযোগ আসেনি, এমনকি নির্বাচনের আগেও এরকম ঘটনা জেলায় ঘটেনি। আমরা বীরভূমের নানুরের বিজেপি প্রার্থী তারকেশ্বর সাহার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি জানান এরকম ঘটনার খবর তার জানা নেই। ফলাফলের পরে এখনও অবধি কেবলমাত্র একটি সন্ত্রাসের ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে একজন ছেলেকে অনেকজন মিলে মারধোর করে। এই মর্মে থানায় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।“
“নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে দাবি আসছে যে বীরভূমে লোকেদের বাড়িতে বোমা ফেলা হচ্ছে, কিন্তু আদতে সেটা না। এরকম না যে জেলায় মারামারি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে না, ঘটছে খোলা রাস্তায় বা মাঠে ঘাটে বোমাবাজির ঘটনা দেখা গিয়েছে। কারও বাড়ি ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা এই জেলায় হয়নি।,” ত্রিপাঠিবাবু বলেন।
ছবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, “এই ছবি হাতে পাওয়ার পর খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। বীরভূমের কোথাও এরকম কোনও দেহ পাওয়া যায়নি এবং জেলার কোনও থানাতেই এরকম পরিত্যক্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার কোনও খবর সামনে আসেনি। ধর্ষণ ছাড়াও এটা যদি অন্য কোনও ঘটনাও হত তবুও মামলা দায়ের করা হত। কিন্তু এরকম কিছুই ঘটেনি।“
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পর হিংসা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়তে সবার উদেশ্যে তিনি বলেন, “নির্বাচনের পর থেকে আমরা পুলিশ লেভেলে পিস মিটিং করছি। সঙ্গে সবাইকে অনুরোধ করছি এই পরিস্থিতিতে সাবধান থাকুন, ভালো থাকুন এবং না জেনে তথ্য যাচাই না করে এরকম গুজব ছড়াবেন না।“
এরপর আমরা বিজেপি মুখপাত্র সায়ন্তন বসুর সাথে কথা বলি। তার কাছে ভাইরাল হওয়া এই ছবির মহিলার নাম, কোথায় বাড়ি এবং এই বিষয়ে আরও তথ্য চাওয়ায় তিনি যথাযথ কোনও উত্তরই দেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা বলা হচ্ছে তিনিও একই দাবি কর।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। বীরভূমের এসপি নিজে জানিয়েছেন সম্প্রতি জেলায় ধর্ষণ বা নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।

Title:না, জেলার কোথাও ধর্ষণ বা নির্যাতনের কোনও ঘটনা সামনে আসেনিঃ বীরভূম এসপি
Fact Check By: Rahul AResult: False