ভাষাগত সাদৃশ্য এবং তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় বাংলাদেশের ধর্ষণের ঘটনাকে ঘিরে বিভ্রান্তি

Missing Context Social

অসম্পূর্ণ তথ্য এবং ভাষার মিল থাকার কারনে বাংলাদেশের একটি ঘটনাকে নিয়ে শেয়ার করা একটি পোস্টকে ঘিরে সম্প্রতি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাংলাদেশে সম্প্রতি একটি আদিবাসী তরুণীর ধর্ষণকে কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে। পৃথ্বীরাজ তালুকদার নামে বাংলাদেশের একজন ফেসবুক ইউজার এই অমানবিক ধর্ষণের নিন্দায় একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন,
“এই আদিবাসী মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণ করেছে ৯ জন বাঙালি সেটেলার। মেয়েটিকে দুদিক থেকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটির মা বাবা। রাতভর গ্যাং রেপ করার ফলে অসুস্থ হয়ে যায়, ছবিটা ভালো করে দেখেন, রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখতে পাবেন। ধর্ষণের সময় মেয়েটির মা বাবাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। অস্ত্র দিয়ে ঘর কেটে ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষকরা। এই ছবি দেখে, এই ছবি নিয়ে আমি জানি খুব বেশি মানুষ হইচই করবে না। বাঙালি ভাইয়েরা আদিবাসী মেয়ের সাথে এমন করতেই পারে৷ এসব ইগ্নোর করতে হবে। এসব ভুলে যেতে হবে।“ 

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের প্রধান ভাষা একই হওয়ার দুই বঙ্গের বাসিন্দারা নিজেদের বাঙালি বলে পরিচয় দেন। বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এখানেই। যেহেতু, পোস্টে কোথাও বাংলাদেশের উল্লেখ করা নেই কিন্তু বাঙালির কথা বলা হয়েছে তাই এই পোস্টটিকে পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা বলেও শেয়ার করা হচ্ছে। ‘Calcutta Liberals’ – নামে একটি গ্রুপে এই পোস্টটি শেয়ার করে বলা হয়,
পোস্ট এর সত্যতা যাচাই করিনি,..পোড়ে খারাপ লাগলো, তাই শুধু পোস্টটা শেয়ার করলাম..। ঘটনাটি ঠিক কোথাও ঘটেছে তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় কমেন্ট সেকশনে। 

Bangladesh Rape Claim.png
ফেসবুক আর্কাইভ 

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে আরও দেখতে পেয়েছে পোস্টে শেয়ার করা এই ছবিটি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নির্মম ধর্ষণকান্ডের নয়। এটি ২০১২ সালের অন্য একটি ঘটনার ছবি। 

তথ্য যাচাইঃ 

গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ –এর একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) থেকে জানতে পারি,
“খাগড়াছড়িতে গত বুধবার রাতে এক আদিবাসী পরিবারের বাড়ির দরজা ভেঙে গৃহকর্তা, তার স্ত্রী ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ের হাত-মুখ বেঁধে ফেলে দুর্বৃত্তরা৷ পরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে পাশের রুমে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। এসময় বাড়ির আলমারি থেকে তিন ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায় তারা। পরদিন সকালে গৃহকর্ত্রীর চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নারীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত নয়জনকে আসামি করে মামলা করেন৷ শুক্রবার জেলা সদরে মানবন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষও।“

Prothom Alo.png

আরও বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, পোস্টের ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কোনও যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না। এরপর বিভিন্ন রকম কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘DW বাংলা’ – এর ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে (আর্কাইভ) এই ছবিটি দেখতে পাই। জানতে পারি, এটি ২০১২ সালের খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া অন্য একটি আদিবাসী মেয়ের নির্মম ধর্ষণের ঘটনার ছবি। 

Sumit Chakma.png

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত পোস্টটিতে ভাষাগত সাদৃশ্য এবং তথ্য অসম্পূর্ণ থাকার কারনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পোস্টটিতে উল্লেখ্য ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে নয়। 

Avatar

Title:ভাষাগত সাদৃশ্য এবং তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় বাংলাদেশের ধর্ষণের ঘটনাকে ঘিরে বিভ্রান্তি

Fact Check By: Rahul A 

Result: Missing Context


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *