
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির পরেও প্যালেস্তাইনের শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা।
প্রসঙ্গত, গত মাসে জেরুজালেমে ইজরায়েলি ও প্যালেস্তাইনিদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর আল আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই মসজিদ মুসলিম ও ইহুদিদের দুই ধর্মালম্বীদের কাছে পবিত্র একটি স্থান। সেখান থেকে ইজরায়েলি সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সতর্ক করে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস রকেট ছুঁড়তে শুরু করে। এর জবাবে গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালায় ইজরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই সংঘর্ষে প্রায় একশ নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৩২ প্যালেস্তাইনি নিহত হয়েছে। এরপর ২১ মে হামাস এবং ইজরায়েল, দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতির সামঝোতায় রাজি হয়।
এই যুদ্ধবিরতির সাথে যুক্ত করে শেয়ার করা এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অস্ত্রধারী বাহিনীর একটি দল রাস্তা থেকে কমবয়সী ছেলেদের টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। জামার পেছনে প্রেস লেখা সাংবাদিকরা এই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তাদের তাড়া করছে বাহিনী। এরপর দেখা যাচ্ছে ছেলেগুলিকে একটি কারাগার জাতীয় ঘরে ঢোকানো হচ্ছে যেখানে আগে থেকেই বেশ কয়েকটি ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। ২০১৭ সালের একটি ঘটনাকে সম্প্রতির ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতের সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভিডিওটিকে ‘ইনভিড-উই-ভেরিফাই’ টুলে কয়েকটি ভাগ করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, কয়েকটি ওয়েবসাইটে এই ভিডিওর স্ক্রিনশট দেখতে পাই। ‘এন সোন হাবের’ নামে একটি ওয়েবসাইটের ১৩ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, রাস্তা থেকে প্যালেস্তাইনি নাবালকদের তুলে ধরে তাদের আটকে রাখছে ইজরায়েল পুলিশ।

এরপর ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই ওপরে বাঁদিকে একটি লোগো রয়েছে যেখানে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘বিটিসেলেম (BTSELEM)’। এছাড়াও ভিডিওর ইংরেজি সাবটাইটেল থেকে দেখতে পাই যখন সাংবাদিকরা ছবি তোলার চেষ্টা করে তখন পুলিশ বাহিনী বলে ‘বিটিসেলেম তুমিও পিছিয়ে যায়’। স্বাভাবিক ভাবেই গুগলে এই শব্দ দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং জানতে পারি, বি’স্লেম (B’Tselem)’ হল জেরুজালেমের একটি এনজিও যারা ইজরায়েল অধিকৃত প্যালেস্তাইনি এলাকাগুলিতে মানবিধাকার লঙ্ঘনকে নথিভুক্ত করে। এই সংস্থার উদ্দেশ্য, ইজরায়েল যাতে তাদের বাহিনীর সন্ত্রাস অস্বীকার করতে না পারে তার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা এবং মানবিধাকর বজায় রাখা।
বি’স্লেমের ওয়েবসাইটে এই ভিডিওটি দেখতে পাই। ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, আপলোড করা এই ভিডিওর শীর্ষকে লেখা রয়েছে “হেবরনে রুটিনঃ সেনার সাথে সংঘাতের পর নাবালকরা গ্রেফতার।“ ভিডিওর শুরুতে লেখা রয়েছে “২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর, দুপুর দুটা নাগাদ সেন্ট্রাল হেবরনে কয়েকজন প্যালেস্তাইনি যুবক পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়া শুরু করে। এরপর পুলিশ ১৮ জন ছেলেকে গ্রেফতার করে।“ ভিডিওর শেষে লেখা রয়েছে, “তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর রাত ১০টা নাগাদ ছাড়া হয়।“
আরও দেখতে পাই, ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বি’স্লেমের ফেসবুক পেজ থেকে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছিল।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। ২০১৭ সালের একটি ঘটনাকে সম্প্রতির ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাতের সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনঃ ২০১৭ সালের ভিডিওকে সম্প্রতির ঘটনা দাবি করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context