
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে সেটিকে সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন লোক চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা বই পড়ছেন এবং তার লম্বা চুলের গোছা দড়ি দিয়ে দেওয়ালে বাধা রয়েছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “লোকটি কে জানেন? ছবিটির বেশ কয়েকটি ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। • তার মাথার টিকিটি দেয়ালের সঙ্গে বাঁধা। • চেয়ারের হেলান দেয়ার অংশটি ভাঙ্গা। • ……………………………• পড়া লেখায় জ্ঞান অর্জনের বিষয়টা এখন আর নেই। এটা নেহাত টাইম পাস। পড়ার জন্যই পড়া। ছবির মানুষটি আর কেউ নয়। প্রবাদ প্রতিম পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের দেওয়াল পেরেক দিয়ে চুল বেঁধে বই পড়ার পুরনো ছবিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচায় করতে আমরা ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি স্কুপহুপ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছবিটি ১৯৪৮ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের। চুলের টিকি দেওয়ালে বেঁধে পড়াশোনা করছে যেন পড়তে পড়তে তার ঘুম না আসে। ( আর্কাইভ )
এরপর আমরা প্রাসঙ্গিক কিইওয়ার্ড সার্চ করি এবং Rjjokes নামের এক ওয়েব পোর্টালে এই ছবি দেখতে পাই। চুল দেওয়ালে বেঁধে টেবিলে বই রেখে চেয়ারে বসে থাকা এই ব্যক্তিকে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে দাবি করা হয়েছে।

এরপর স্টক ছবির সংস্থা ইউকিমিডিয়া থেকে এই ছবির বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যায়। রুশ লেখক ও সাংবাদিক ভি এম ডোরোশেভিচের লেখা বই ‘ইস্ট অ্যান্ড ওয়ার -এর ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় এই ছবির দেখতে পাওয়া পাওয়া যায়। ছবির বর্ণনায় লেখা হয় “মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি (প্রচণ্ড পরিশ্রম করছে, চুল পেরেক দিয়ে দেওয়ালে বেঁধে রেখেছেন যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন)।”

ইউকিমিডিয়াতে এই ছবির বর্ণনায় লেখা রয়েছে ছবিটি প্রথমে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ভি এম বা ভ্লাস মিখাইলোভিচ ডোরোশেভিচের জন্ম ১৮৬৪ সালে এবং মৃত্যু ১৯২২ সালে। যেহেতু ডোরোশেভিচের বইতে এটিকে ১৯০৫ সালের ছবি বলা হয়েছে এবং লেখকের মৃত্যু ১৯২২ সালে হয়েছে, এর থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় এটি ১৯০৫ সালেরই ছবি।
অন্যদিকে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম হয়ে ১৮২০ সালে এবং মৃত্যু হয় ১৮৯১ সালে। তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে পড়াশুনা করেছিলেন। এরপর তিনি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং সংস্কৃত কলেজে শিক্ষকতা করেন। তার মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা বা শিক্ষকতার কোনও তথ্য আমরা খুঁজে পাইনি। এর থেকে স্পষ্টভাবে বলা যায় ১৯০৫ সালের প্রকাশিত এই ছবির ব্যক্তি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নয়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিস্যান্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের দেওয়াল পেরেক দিয়ে চুল বেঁধে বই পড়ার পুরনো ছবিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:পেরেক দিয়ে দেওয়ালে চুল বেঁধে পড়াশুনা করতেন বিদ্যাসাগর? জানুন ভাইরাল ছবির সত্যতা
Fact Check By: Nasim AResult: False