
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বোরখা পোড়াতে গিয়ে নিজেই পুড়ে গেলেন মহিলা। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জল ট্যাঙ্কের ওপরে দাড়িয়ে থাকা ৪ জন মহিলার মধ্যে একজন একটি কালো বস্তুতে আগুন লাগাচ্ছে এবং পর মুহূর্তে সেই আগুন তার গায়েই লেগে যায়।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছেঃ বোরখা জ্বালাতে গিয়ে নিজেই পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না 💙 আল্লাহু আকবার 🔥🖤।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে প্রদর্শনরত মহিলার আগুনে পুড়ে যাওয়ার পুরনো ভিডিওকে হিজাব বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে স্কুলে ছাত্রীদের হিজাব পরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরা যাবে কিনা এই নিয়ে বর্তমানে কর্ণাটক হাইকোর্টে শুনানি চলছে। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি চালু হবে। পড়ুন বিস্তারিত।
তথ্য যাচাই
এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কি ফ্রেমে ভেঙ্গে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, জয়নাল আবদিন নামের ফেসবুক প্রোফাইল সহ আরও কয়েকটি প্রোফাইলে এই ভিডিওর অনুসন্ধান পাই।
জয়নাল আবদিনের প্রোফাইলে এই ভিডিও ২০১৫ সালের ৪ জুন তারিখে আপলোড করা হয়েছে যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “মেয়েটি নিজের শরীর থেকে বোরখা খুলে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দিল। তারপর সেই বোরখার আগুনে নিজেই পুড়ে গেল আল্লাহু আকবর! বোরখাকে অবমাননা করে পোড়াতে গিয়ে সেই আগুনে নিজেই পুড়ে গেলো। ( ভিডিও সহ)।”
উপরের ভিডিও থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় এটি পুরনো ভিডিও এবং এর সাথে হিজাব বিতর্কের কোনও সম্পর্ক নেই।
এই সুত্র ধরে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম ‘এনডি টিভি’র ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখের প্রতিবেদনে এজাতীয় ঘটনার উল্লেখ পাই। প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘটনাটি পাঞ্জাবের কাপুরথালা গ্রামের। আগুনের শিকার এই মহিলার নাম কিরণজিৎ কৌর। পেশাগত ভাবে তিনি একজন শিক্ষিকা। ৩৭০ জন ইজিসি শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে কিরণজিৎ কৌর আরও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে একটি জলের ট্যাঙ্কে উঠে প্রতিবাদ করে। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে ভুলবসত নিজেই পুড়ে যান। এতে তার শরীরের ৯০% খতিগ্রস্থ হয় এবং তিনি মারা যান।

ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই ঘটনাকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম ’জি নিউজ’এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাই। এই প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
তথ্য প্রমানের সাপেক্ষে স্পষ্ট হয়ে যায় ভাইরাল ভিডিওটি সম্প্রতির নয় এবং হিজাব বিতর্কের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই। ২০১০ সালে পাঞ্জাবের কাপুরথালা গ্রামের প্রদর্শনরত শিক্ষিকার আগুনে পুড়ে যাওয়ার খবরকে শেয়ার করে ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে প্রদর্শনরত মহিলার আগুনে পুড়ে যাওয়ার পুরনো ভিডিওকে হিজাব বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে

Title:২০১০ সালের পাঞ্জাবের ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: False