৫ অক্টোবর তারিখ থেকে ভারতের মাটিতে শুরু হচ্ছে পুরুষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩। এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলগুলো ইতিমধ্যে পা রেখেছে ভারতের মাটিতে। ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করেছে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তান দলের অধিয়ানক বাবর আজম সহ ইমাম উল হক, শাহিন শাহ আফ্রিদি এবং নাওয়াজের একটি ছবি বেশ সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে বেশ ভাইরাল। ছবিটিতে তাদেরকে এক বদ্ধ ঘরের মধ্যে দিয়ে চলার ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে। তাদের পটভূমিতে থাকা দেওয়ালে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী আত্মসমর্পণ পত্রে স্বাক্ষর করার ফ্রেমবন্দী ছবিটি টাঙানো দেখা যাচ্ছে। আসলেই কি এরকম কোন বদ্ধ ঘরের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান খেলোয়াড়রা যাচ্ছিলেন। ভাইরাল এই ছবির সত্যতা যাচাইকে ঘিরেই আজকের এই প্রতিবেদন।

ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” ভারতের স্টেডিয়ামে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশের কাছে আত্নসমর্পণ করেছিলো সেই ছবি দেয়ালে টাঙ্গানো! আর মজার বিষয় হলো ঠিক সেই ছবির সামনে দিয়ে পাকিস্তান দলের প্লেয়াররা হেঁটে যাচ্ছে 👀।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি ভুয়ো। আসল ছবিতে পটভূমির দেওয়ালে কোন ফ্রেমবন্দী ছবি ছিল না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর আত্মসমর্পণ করার ফ্রেমবন্দী ছবিটি সম্পাদিত করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

তথ্য যাচাইঃ

ভাইরাল ছবির সত্যতা যাচাই করতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, ফ্রি প্রেস, তেলেঙ্গানা টুডে সহ দি স্টেটসম্যান এর প্রতিবেদনে এই একই রকম ছবির উল্লেখ পাওয়া যায়। ফ্রি প্রেস জার্নালের এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে,” আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তান ক্রিকেট দল হায়দ্রাবাদে অবতরণ করেছে, বিমানবন্দরে ভক্তরা স্বাগত জানিয়েছে।“ প্রতিবেদন গুলোর ছবিতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের পেছনে থাকা দেওয়ালে কোন রকমের ছবি টাঙানো দেখা যায় না। ৭ বছরের মধ্যে প্রথমবার পাকিস্তান ক্রিকেট দল ভারতে এসেছে। তাদের আগের সফরটি ছিল ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

প্রতিবেদন আর্কাইভ
তেলেঙ্গানা টুডে প্রতিবেদন আর্কাইভ
দি স্টেটসম্যান প্রতিবেদন আর্কাইভ

বাবর আজমদের বদ্ধ ঘরের মত জায়গায় হাঁটার আসল ভিডিওতেও তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা দেওয়ালে কোন রকমের ছবি টাঙানো অবস্থায় দেখা যায়নি। ভিডিওটি থেকে নিশ্চিত হয় যে, তারা কোন বদ্ধ ঘরে নয় বরং বিমানবন্দরের টানেলের মধ্যে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন।

নীচে তুলনামূলক ফ্রেমটি দেখুনঃ

এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক সৈন্যের আত্মসমর্পরনের ছবিটিকে আসল ছবির সাথে সম্পাদিত করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করে যার ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে একটি নতুন জাতি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় সামরিক আত্মসমর্পণ। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৯৩,০০০ সৈন্য তাদের ত্যাগ করেছিল। নতুন জাতির জন্ম দেয় বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। দেওয়ালে টাঙানো ছবিটি সেই আত্মসমর্পনের।

নিষ্কর্ষঃ

তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। ভাইরাল ছবিতে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেলের আত্মসমর্পনের ফ্রেমবন্দী ছবিটি ছিল না। সম্পাদিত করে ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

Avatar

Title:বাবর আজমদের ভাইরাল এই ছবিটিতে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সৈন্যের আত্মসমর্পনের ছবিটি ছিল না

Written By: Nasim Akhtar

Result: Altered