
পশ্চিমবঙ্গে মানুষরূপী অদ্ভুত প্রাণীর আবির্ভাব? সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পুরুলিয়ার জঙ্গলে এবার দেখা মিলল এক অদ্ভুত দর্শন প্রাণীর। ‘Banglar Pran’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করা হয়েছে।

একজন পাঠক আমাদের হোয়াটসঅ্যাপের ফ্যাক্ট লাইনে এই খবরটির তথ্য যাচাই করার জন্য আবেদন করে। এই প্রতিবেদনটির শেষের দিকে এই খবরটি যে ভুয়ো তা উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু শিরোনাম বিভ্রান্তিকর হওয়ার জন্য পুরো প্রতিবেদনটি অন্য অর্থ বহন করছে।
তথ্য যাচাই
গুগলে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই, লাইরা মাগানুকোর নামে একজন শিল্পী ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অদ্ভুত দেখতে এই প্রাণীটির একটি ছবি ইন্সতাগ্রাম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন। এই পোস্টটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন ‘আরমাডিলো হাইব্রিড’।
তিনি নিজেকে ‘হাইপার রিয়েলিজম সিলিকন শিল্পী’ বলে দাবি করেন। তার প্রোফাইলে আরও বিভিন্ন অদ্ভুদ প্রাণী জাতীয় ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়।


আরও দেখতে পাই, লাইরা মাগানুকোর তার আরমাডিলো হাইব্রিড ভাস্কর্যটির অনেকগুলি ছবি এবং একটি ভিডিও ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছন, “সিঙ্গেল পিস সিলিকন আরমাডিলো হাইব্রিড”।
তার প্রোফাইল থেকেই জানতে পারি এই ভাস্কর্যটি ‘Etsy’ নামে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কিনতে পাওয়া যাবে। এটির বিবরণে লেখা রয়েছে, ‘এসিটিক সিলিকন পেস্টে ব্যবহার করে পুরোপুরি ভাবে হাতে তৈরি’।

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো এর আগে হিন্দি ভাষায় এই ভুয়ো ছবিগুলির তথ্য যাচাই করে। এই আর্মাডিলোর ভাস্কর্যের ছবির সাথে কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়, এই প্রাণীটি এই পর্যন্ত ৫-৭ জন কৃষকদের জখম করেছে।

এছাড়াও আরও বিভিন্ন রকম ভুয়ো দাবির সাথে এই ছবিগুলি শেয়ার করা হয়।

এই ছবিটির তথ্য যাচাই করার পর এর সাথে শেয়ার করা ভিডিওগুলির অনুসন্ধান করি। এই পোস্টের কমেন্ট সেকশন থেকে জানতে পারি এগুলি রাজস্থানের সাঞ্চোর গ্রামের ভিডিও।

এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন (আর্কাইভ) থেকে জানতে পারি রাজস্থানের জালোর জেলার সাঞ্চোর গ্রামে এক বন্য জন্তুর সাথে সংঘর্ষে আহত হয় ৪ জন কৃষক। জালোর জেলার বনবিভাগের আধিকারিকরা ওই বন্য জন্তুটিকে শেষ পর্যন্ত ধরতে পারেনি।

এরপর আমরা জালোর জেলার এসপি শ্যাম সিংহের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, “একটি বন্য জন্তু সাঞ্চোর গ্রামে ঢুকে পড়েছে এবং বেশ কয়েকজন কৃষককে জখম করছে। এখনও অবধি জন্তুটিকে ধরা সম্ভব হয়নি, বনবিভাগ খোঁজার চেষ্টা করছে।“
এরপর আমরা জালোর জেলার সহকারি বন সংরক্ষণকর্মী অমিত চৌহানের সাথে যোগাযোগ করি। ভাইরাল এই ভিডিওটির ব্যাপারে তিনি বলেন,
“২৭ অগস্টের আশেপাশে একটি চিতাবাঘ জালোর জেলার সাঞ্চোর গ্রামে ঢুকে পরে। কৃষকরা যখন এই চিতাটিক তাদের জমিতে দেখতে পায় তখন তারা বুঝতে পারেনি এটি চিতাবাঘ। সাধারান বেড়াল জাতীয় প্রানী ভেবে কৃষকরা জন্তুটির পাশে যায়। জন্তুটির থেকে ৫ মিটার দূরে আসার পর কৃষকরা বুঝতে পারে এতি একটি চিতা কিন্তু ততক্ষনে চিতাটি নিজের প্রান বাঁচানোর জন্য তাদের ওপর হামলা করে। একজনের হাত যখম হয় এবং অন্য একজনের পেট ও পিঠ আহত করে জন্তুটি। মোট তিনজনকে আহত করেছে এই বন্যপ্রানীটি যার মধ্যে দুজন কৃষক এবং একজন বন দফতরের আধিকারিক।“
তিনি আরও বলেন, “জালোর জেলায় প্রবল বৃষ্টি হওয়ার কারনে চিতাটিকে ট্র্যাক করে ট্র্যাঙ্কুলাইজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ট্র্যাঙ্কুলাইজ অর্থাৎ বন্দুক থেকে ওষুধ লাগানো ইঞ্জেকশন করে অজ্ঞ্যান করা। গ্রামে ঢুকে পরা চিতাটির পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে জন্তুটিকে ট্র্যাক করার চেষ্টা চলছে।“
নিষ্কর্ষঃ আর্মাডিলোর মতো দেখতে এই প্রাণীটি আসলে সিলিকনের তৈরি একটি ভাস্কর্য। লাইরা মাগানুকোর নামে একজন শিল্পী এটি তৈরি করেছেন।

Title:সিলিকনের তৈরি ভাস্কর্যের ছবিকে পুরুলিয়ার অদ্ভুদ প্রাণী বলে ভুয়ো দাবি
Fact Check By: Rahul AResult: False