
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে সেটিকে ত্রিপুরায় চলমান সাম্প্রদায়িক অশান্তির দৃশ্য বলে বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি রাস্তায় জনগণের একটি বিশাল ভিড় দাড়িয়ে রয়েছে এবং তাদের সামনেই দাউ দাউ করে কাঠ, কার্ডবোর্ড এবং কাগজের একটি অগ্নিস্তুপ জ্বলছে। দেখে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে কোনও বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনার যেখানে আগুন জালিয়ে প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “আজ নিঃস্ব হি*ন্দু পরিষদ ত্রিপুরায় ১৫টি মসজিদ ভাঙচুর করেছে মিছিল করে। ৩টি মসজিদ সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলা হয়। মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দোকানপাট লুট করা হয়। মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ চলছে ত্রিপুরায়।সিপিআইএমের দুটি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মিডিয়া হাউসে হামলা হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে। অনেকে আহত হয়। সিসিটিভি ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। সর্বত্র অগ্নিসংযোগ চলছে। এক সপ্তাহ ধরে এসব চলছে। কোনো টিভি চ্যানেলে কোনো খবর নেই। এ নিয়ে কোনো নেতার কোনো টুইট নেই। এত ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ত্রিপুরা কি ভারতের বাইরে……? #AIMIM #SaveTripuraMosque #SaveTripuraMuslims #SaveTripura #TripuraMuslimsUnderAttack #ত্রিপুরাতে #aimim_national #assamaimim।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভিত্তিহীন। ২০১৯ সালে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আসামের প্রতিবাদ মিছিলের ছবিকে ত্রিপুরার ধর্মীয় হিংসার ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে দুর্গা প্রতিমার পায়ে ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর আসের ওই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই আক্রমনের বিরুদ্ধে ভারতের অনেক জায়গায় প্রতিবাদ সভা হয়। ২১ অক্টোবর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-এর নেতৃত্বে ত্রিপুরার গোমতী জেলায় এক বিক্ষোভ প্রদর্শনের মিছিল হিংসাত্মক রুপ ধারন করে যার জেরে বেশ কিছু বাড়ি, দোকান ও মসজিদে হামলা করা হয়। এরপর ২৬ তারিখ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর নেতৃত্বে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় এবং সেখানেও বিক্ষোভকারীদের কিছুসংখ্যক লোক রোয়া বাজারে কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে এবমহ কয়েকটি দোকান ও মসজিদে আক্রমণ করে। ৩০ অক্টোবর লক্ষিপুর এবং কইলাশহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ ইঞ্জিনে সার্চ করি। ফলাফলে মুখ্যধারার সংবাদ মাধ্যম ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, তারিখের একটি প্রতিবেদনে এই ছবির উল্লেখ পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর লোকসভা থেকে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (CAB) কেন্দ্র করে দেশজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। পোস্টের ভাইরাল এই ছবিটি আসামের গুয়াহাটির একটি CAB-বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য।

সংবাদ মাধ্যম ‘উড়িষ্যাপোস্ট’-এর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখের একটি প্রতিবেদনে থেকেও এই একই খবর জানতে পারি।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৯ সালে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আসামের প্রতিবাদ মিছিলের ছবিকে ত্রিপুরার ধর্মীয় হিংসার ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিলের ছবিকে ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক অশান্তির দৃশ্য বলে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে
Fact Check By: Nasim AResult: False