
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দেওয়ার জেরে মধ্যপ্রদেশে উজ্জয়িনীতে বস্তি ভেঙে দিল পুলিশ। ২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বুলডোজার দিয়ে টিনের তৈরি ঘর ভাঙা হচ্ছে। অনেকগুলি পুলিশ কর্মী ওই জায়গাকে ঘিরে দাড়িয়ে রয়েছে। পুলিশ ছাড়াও অনেক স্থানীয়কেও দেখা যাচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “♥♥//মধ্য প্রদেশের উজ্জয়নীর গফুর বস্তি যেখানে তালিবান এবং পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান উঠেছিলো, শিবরাজ সিং সরকারের প্রশাসন পুরো বস্তিকেই ধ্বংস করে দিয়েছে, প্রশাসন হো তো এ্যাইসা……….।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের আদেশে উজ্জয়িনীর হারিফাটক ব্রিজের কাছে সরকারি জায়গাতে থাকা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভিডিওকে কয়েকটি ফ্রেমে ভাগ করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে কোনও যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না। এরপর প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে ইউটিউবে এর অনুসন্ধান পাই। ‘এইচ বি সি নিউজ ১৮ (HBC NEWS 18)’ নামে একটি নিউজ পোর্টালের ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিও কেন্দ্রিক একটি উপস্থাপনা দেখতে পাই। চলতি বছরের ২৮ অগস্ট আপলোড করা এই প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে, “উজ্জয়িনী পুলিশ ও পৌর কর্পোরেশনের যৌথ পদক্ষেপে অবৈধ দখল অপসারণ।“ জানতে পারি, উজ্জয়িনী পুলিশ এবং পৌর কর্পোরেশনের কর্মীদের উপস্থিতিতে শহরে অবৈধ ভাবে নির্মিত ঘর-বাড়ি এবং দোকান ভেঙে ফেলা হয়।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ায় শিবরাজ সিং সরকারের আদেশে গফুর বস্তির ঘর বাড়ি ভাঙা হচ্ছে বা এজাতীয় কোনও তথ্যের উল্লেখ্য পাওয়া যায় না এই উপস্থাপনায়।
সংবাদ মাধ্যম ‘দৈনিক ভাস্কর’-এর ২৭ অগস্ট’র একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ পাই। এই খবর পড়েও একই কথা জানতে পারি। ইন্দোর রোডে থাকা হরিফাটক ওভার ব্রিজের পাশে দোকানদারেরা ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে নিজেদের গুদাম ও দোকান চালাচ্ছিল। ২৭ অগস্ট আশেপাশের ৫টি থানার পুলিশ সমস্ত অবৈধ ঘর, বাড়ি এবং দোকান পরিস্কার করে দেন। স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় ওই জায়গায় পার্কিং সহ শিপ্রা নদীর ঘাট, বাগান এবং ওয়াকার জোন নির্মাণ করা হবে বলে জানানো হয়।

সংবাদমাধ্যম ‘দি প্রেস জার্নাল’-এর ২৮ অগস্ট’র প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি।
এই ঘটনা নিয়ে অনেকগুলি প্রতিবেদন খুঁজে পাই কিন্তু কোথাও পাকিস্তান সমর্থনের জন্য গফুর বস্তি ধূলিসাৎ করা হয়েছে এজাতীয় কোনও খবর দেখতে পাওয়া যায় না।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো উজ্জায়িনীর নীলগঙ্গা থানার এস.এচ.ও তরুন কুরিল-এর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি উজ্জায়িনীতে অবস্থিত হরিফাটক সেতু এলাকার। যে সমস্ত জায়গা থেকে অবৈধ নির্মাণ সরানো হচ্ছে তা সরকারি অর্থাৎ পৌরসভার জমি। আদালতের থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, আদেশ অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ওই জমি থেকে অবৈধ নির্মাণ সরানো হয়েছে।“
এরপর আমরা উজ্জয়িনী এলাকার এস.পি সত্যেন্দ্র কুমার শুক্লা-এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “প্রথমত উজ্জয়িনীতে গফুর বস্তি নামে কোনও জায়গা নেই। ভাইরাল ভিডিওতে হরিফাটকের কাছাকাছি অবৈধভাবে দখল করা দুই হেক্টরেরও বেশি পৌরসভার জমি থেকে অবৈধ নির্মাণ সরানো হচ্ছে। অতীতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান তোলার ঘটনার সঙ্গে এই ভিডিওটির কোনো সম্পর্ক নেই। দুটো একেবারেই পৃথক মামলা। অবৈধ নির্মাণ অপসারণ এবং স্লোগান তোলার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।“
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের আদেশে উজ্জয়িনীর হারিফাটক ব্রিজের কাছে সরকারি জায়গাতে থাকা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:উজ্জয়িনীতে অবৈধ নির্মাণ অপসারণের ভিডিওকে ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে
Fact Check By: Nasim AResult: False