
১৯ সেপ্টেম্বর খ্যাতনামা গায়ক জুবিন গর্গের মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রীসহ বহু রাজনৈতিক নেতা, সঙ্গীতশিল্পী ও ভক্তরা তাঁর অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। জুবিন গর্গ সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগত সফরে ছিলেন এবং ছুটি কাটানোর সময় স্কুবা ডাইভিং করছিলেন। ডাইভিং চলাকালীন তিনি হঠাৎ শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেন এবং জলে অচেতন হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে Singapore General Hospital-এ নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি। এই প্রেক্ষিতে একটি ডাইভিংয়ের ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে গায়কের শেষ ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ডাইভার জলের মাঝে অচেতন হয়ে পড়লে তাঁর প্রশিক্ষক দ্রুত তাঁকে উপরে তুলে আনেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর চেতনা ফিরে আসে।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”জুবিন গর্গ এর অকাল প্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ 😢 আসাম বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষ বিখ্যাত গায়ক জুবিন গর্গ সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়েই ঘটলো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ওনার আত্মার চির শান্তি কামনা করি 🙏🏻🙏🏻।“
তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি ভিডিওটি গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওতে অচেতন হয়ে যাওয়া ব্যক্তির নাম মারত, যিনি একজন রাশিয়ান ফ্রি ডাইভার এবং প্রশিক্ষক-এর নাম গাস ক্রেভেনাস।
তথ্য যাচাইঃ
ভিডিওটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ডাইভার বা প্রশিক্ষকের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই — যা ফ্রি ডাইভিং-এর একটি বৈশিষ্ট্য। অথচ আমরা সংবাদমাধ্যম মারফত জেনেছি, গায়কের মৃত্যু ঘটেছে স্কুবা ডাইভিং (অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ ডাইভিং)-এর সময়। এই তথ্যদ্বয়ের ভিত্তিতে প্রাথমিক পর্যায়েই ভিডিওটি নিয়ে করা দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
তারপর, ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে হুবহু এই ভিডিওটি বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়। একটি চ্যানেলে এটি ১৯ জুলাইয়ে আপলোড করা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে- যখন এই ব্যক্তি সমুদ্রের ৭৮ মিটার গভীর থেকে উপরে উঠছিলেন, তখন তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত, প্রশিক্ষিত ডাইভাররা তাকে নজরে রেখেছিলেন। তারা দ্রুত তাকে জলের উপরের দিকে ঠেলে তোলেন এবং তার মুখ চেপে ধরে রাখেন, যাতে পানি ভেতরে ঢুকতে না পারে। সে কিছু সময়ের জন্য অচেতন থাকলেও, পরে জ্ঞান ফিরে পায়, আর এইভাবে তার প্রাণ রক্ষা পায়। যা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভিডিওটি গায়কের মৃত্যুর ঘটনার আগে থেকেই ইন্টারনেটে উপলব্ধ রয়েছে অর্থাৎ ভিডিওটি তার মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত নয়।
অন্য এক ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি ২০ জুন,২০২৫, তারিখে আপলোড করে লেখা হয়েছে- এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে এক ফ্রি ডাইভার গভীর সমুদ্র থেকে উপরে উঠছেন। যখন তিনি পানির পৃষ্ঠের কাছাকাছি আসেন, তখন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান এবং চেতনা হারান। 😵 সেইফটি ডাইভাররা দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান এবং তাকে তড়িত্ গতিতে উপরে টেনে আনেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ডাইভার চেতনা ফিরে পান এবং নিজে থেকেই শ্বাস নিতে শুরু করেন। এটি একটি শক্তিশালী বার্তা — অভিজ্ঞ সেইফটি ডাইভারের গুরুত্ব কতটা এবং কেন কখনই একা ডাইভ করা উচিত নয়, তা আবারও মনে করিয়ে দেয়!
এই ভিডিওর ক্রেডিট দেওয়ে হয়েছে ‘@stop.the.sun’ নামক এক ইন্সটা হ্যান্ডেলকে।
উপরোক্ত নামটিকে ইন্সটাগ্রামে সার্চ করলে একটি প্রোফাইল পেয়ে যায়। তার প্রোফাইল থেকে এই ভিডিওটি ১৪ মে,২০২৫, তারিখে পোস্ট করে লিখেছেন,” প্রথমবারের মতো পানির নিচে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। ৭৮ মিটার গভীরতা থেকে উপরে ওঠার সময় ঘটনাটি ঘটে।…”
তার প্রোফাইল ঘেঁটে জানা যায়, তার নাম মারত। তিনি একজন ফ্রি ডাইভার এবং রাশিয়ার বাসিন্দা।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভিডিওটি গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওতে অচেতন হয়ে যাওয়া ব্যক্তির নাম মারত, যিনি একজন রাশিয়ান ফ্রি ডাইভার।

Title:না, ডাইভির-এর এই ভিডিওটি জুবিন গার্গের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত নয়
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False