এক্সে হোয়াইট হাউসের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আনফলো করার খবরটি ২০২০ সালের 

Missing Context Political

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দাবি ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আনফলো করেছে। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

এক ফেসবুক ইউজার এই দাবি করে ক্যাপশনে লিখেছনে,”বিশ্ব গুরুর এ কি হাল ! একে তো ট্রাম্প এর শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন না, তার উপর হোয়াইট হাউস বিশ্ব গুরুকে আনফলো করে দিলো!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ ভারতবাসী এ লজ্জা রাখবে কোথায় ???” 

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি যে হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আনফলো করার খবরটি ২০২০ সালের অর্থাৎ চার বছর পুরনো। 

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

তথ্য যাচাইঃ 

পোস্টের ছবিতে ‘আজতাক’-এর একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে যার শিরোনামে লেখা হয়েছে,” चंद दिनों में बदला अमेरिका का रुख? ट्विटर पर व्हाइट हाउस ने मोदी को किया अनफॉलो” অর্থাৎ কয়েকদিনের মধ্যে পাল্টে গেল আমেরিকার অবস্থান? হোয়াইট হাউস টুইটারে মোদিকে আনফলো করেছে। গুগলে সার্চের মাধ্যমে আমরা ‘আজতাক’-এর সেই প্রতিবেদনটি খুঁজে পাই।  প্রতিবেদনটি ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল তারিখের। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর হোয়াইট হাউস ২০২০ সালের ১০ এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স অ্যাকাউন্ট ফলো করেছিল। 

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন আমেরিকা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে এসেছিলেন এবং হোয়াইট হাউস কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় এক্স (টুইটার)অ্যাকাউন্ট ফলো করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, রাষ্ট্রপতি ভবন, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাস, ভারতে মার্কিন দূতাবাস, এবং সেই সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত কেন জাস্টারের অ্যাকাউন্ট। 

কিছু দিন পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিলে হোয়াইট হাউস ভারতের সাথে যুক্ত সকল এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট আনফলো করেছিল যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের অ্যাকাউন্টও ছিল। 

এই ‘আনফলো’ ঘটনাটি ভারতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। কারণ অনেকেই এটি ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে একটি ন্যায্য ও গুরুত্বহীন পদক্ষেপ হিসেবে দেখেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিরোধী দলগুলি এটিকে কূটনৈতিকভাবে অশোভন এবং ভারতের প্রতি অসম্মানজনক হিসেবে দেখেছিলেন। বিশেষ করে যখন ভারত করোনা মহামারী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করেছিল। 

বিরোধী দল নেতা রাহুল গান্ধী লিখেছিলেন,”হোয়াইট হাউস দ্বারা আমাদের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘আনফলোয়িং’ দেখে আমি হতাশ। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রককে নোট করার জন্য অনুরোধ করছি।“ 

এই নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল এবং ইন্টারনেটে উত্তেজনা বাড়ার পর হোয়াইট হাউস জানায় কেন তারা প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অন্যান্য ভারতীয় এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টগুলোকে আনফলো করেছে।

হোয়াইট হাউস এবং অন্যান্য সরকারি অ্যাকাউন্টগুলি সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ইভেন্ট, যেমন শীর্ষ সম্মেলন বা সফরের সময় বিদেশী নেতাদের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেল ফলো করে। যাতে সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং সমর্থন প্রকাশ করা যায়।  

একটি সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানান,”হোয়াইট হাউসের টুইটার অ্যাকাউন্ট সাধারণত সিনিয়র মার্কিন সরকারি টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো এবং অন্যান্য সম্পর্কিত অ্যাকাউন্ট ফলো করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্টের সফরের সময়, অ্যাকাউন্টটি স্বাগতিক দেশের কর্মকর্তাদের কিছু সময়ের জন্য ফলো করে এবং তাদের বার্তা রিটুইট করে সফরের সমর্থনে।”

সরলভাবে বললে, হোয়াইট হাউস সফরের বা কূটনৈতিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য শেষ হলে সাধারণত ফলো করা অ্যাকাউন্টগুলো আনফলো করে দেয়। কারণ এর পর আর সফরের উদ্দেশ্য বা সমর্থন জানানো প্রয়োজনীয় নয়। 

দি হিন্দু প্রতিবেদন আর্কাইভ 

বর্তমানে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন হোয়াইট হাউসের টুইটার (এখন X) অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।তারপর, হোয়াইট হাউসের সমস্ত অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ট্রাম্পের টিমের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন করে সামাজিক মিডিয়া পরিচালনা করবে। এটি এক ধরনের নিয়মিত প্রক্রিয়া যেখানে নতুন প্রেসিডেন্টের প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো তাদের দখলে চলে যায়। এখন পর্যন্ত, হোয়াইট হাউস ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টটি ফলো করছে না।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এক্সে হোয়াইট হাউসের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আনফলো করার ঘটনা ২০২০ সালের। এটি একটি পুরানো খবর এবং বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সাথে সম্পর্কিত নয়। 

Avatar

Title:এক্সে হোয়াইট হাউসের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আনফলো করার খবরটি ২০২০ সালের

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: Missing Context


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *