মহিলাদের চেঞ্জিং রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে সম্প্রচার দেখার অভিযোগে সাধুদের মারধর করা হচ্ছে? জানুন ভিডিওটির সত্যতা

Misleading Social

সম্প্রতি ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বিশাল ভাইরাল হচ্ছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি বদ্ধ ঘরে সাধুর পোশাকে থাকা তিন-চারজন ব্যক্তিকে নির্মমভাবে মারধর করছেন দুইজন মানুষ। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের। গাজিয়াবাদের মুরাদ নগর মন্দিরের বাইরে মহিলাদের চেঞ্জিং রুমে গোপনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে তার সম্প্রচার দেখতেন মন্দিরের পুরোহিত ও মোহন্তরা। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”গাজীয়াবাদের মুরাদ নগরে মন্দিরের বাইরে মহিলাদের জন্য পোশাক পরিবর্তনের রুম রেখেছিল ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। আশ্চর্যের বিষয় ঐ রুমে CCTV লাগানো রয়েছে যার ডাইরেক্ট লাইভ মন্দিরের পূজারী ও মোহন্তদের মোবাইল ফোনে পাওয়া গিয়েছে। মহিলাদের FIR-এর ভিত্তিতে পুলিশি তদন্তে এরা ধরা পড়ে। তারপর যারা ধরা পড়েছে এই হাল, মূল অভিযুক্ত এখনও ফেরার।“ 

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে এই দাবি ভুয়ো। মন্দিরের পোশাক পরিবর্তনের ঘরে সিসিটিভি লাগানোর ঘটনা ২০২৪ সালের মে মাসে ঘটেছিল। আর ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার, যা মূলত গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা তিনজন সাধুকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের ঘটনার।

ফেসবুক পোস্ট 

তথ্য যাচাইঃ 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলস্বরুপ, এই একই ভিডিও একই দাবি সহ বেশ অনেক এক্স প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা মিলে। এরকম একটি পোস্টের নীচে ‘Ghaziabad Police Commissionerate’ –এর অফিসিয়াল এক্স প্রোফাইল থেকে একটি রিপ্লাইয়ে জানানো হয়েছে,”উক্ত ঘটনা পুরনো, যার বিষয়ে ইতিমধ্যেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। টুইটে সংযুক্ত ভিডিওটির সঙ্গে মুরাদনগর গঙ্গনহার মন্দিরের কোনো সম্পর্ক নেই। অনুগ্রহ করে গুজব ছড়াবেন না। গুজব ছড়ালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“ 

scrnli_S37coO840x81KY.png

এক্স পোস্ট আর্কাইভ 

সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে মাসের শেষ দিকে গাজিয়াবাদের মুরাদনগরের গঙ্গানহর মন্দিরের বাইরে থাকা মহিলাদের পোশাক পরিবর্তনের ঘরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো দেখতে পান এক মহিলা ও তাঁর ১৪ বছরের কন্যা। তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। তদন্তে জানা যায় সেই ক্যামেরার লাইভ ফিড যুক্ত ছিল মন্দিরের মহন্ত মুকেশ গোস্বামীর মোবাইল ফোনের সঙ্গে। তাঁর মোবাইল থেকে বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ভিডিও রেকর্ডিং উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় মহন্ত মুকেশ গোস্বামীর বিরুদ্ধে IPC ধারার ৩৫৪, ৩৫৪(সি), ৫০৪ ও ৫০৬ অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়। 

ভিডিওর আসল উৎস? 

স্বরাজ্য এবং ইন্ডিয়া ডট কম-এর ১৩ জানুয়ারি,২০২৪, তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের বেরেলি থেকে আগত তিনজন সাধু গঙ্গাসাগর মেলায় যোগ যাচ্ছিলেন। যাত্রাপথে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর এলাকায় পৌঁছান। সেখানকার স্থানীয় কিছু মানুষ তাদের দেখে সন্দেহ করেন যে এই তিন সাধুরা শিশু অপহরণ করার উদ্দেশ্যে এসেছেন। এই সন্দেহের ভিত্তিতে তারা তিন সাধুর ওপর হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করেন যার ফলে তারা গুরুতরভাবে আহত হন। 

scrnli_7tBv1pTqVYe21K.png

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে প্রতিবেদন।

নিষ্কর্ষঃ  তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এই দাবি ভুয়ো। মন্দিরের পোশাক পরিবর্তনের ঘরে সিসিটিভি লাগানোর ঘটনা ২০২৪ সালের মে মাসে ঘটেছিল। আর ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার, যা মূলত গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা তিনজন সাধুকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের ঘটনার।

Avatar

Title:মহিলাদের চেঞ্জিং রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে সম্প্রচার দেখার অভিযোগে সাধুদের মারধর করা হচ্ছে? জানুন ভিডিওটির সত্যতা

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: Misleading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *