কেরালায় এক স্টপে বাস থামানো নিয়ে কলেজ ছাত্রীদের বিক্ষোভের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার 

Communal False

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে বোরখা পরিহিত কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে একজন বৃদ্ধা মহিলার সঙ্গে বাসে তর্ক-বিতর্ক চলছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করে হচ্ছে, কেরালায় মুসলিম মেয়েরা ওই হিন্দু বৃদ্ধা মহিলাকে টার্গেট করে কারণ তিনি বোরখা না পরে বাসে উঠেছিলেন এবং তাকে জোর করে বোরকা পরতে বাধ্য করা হচ্ছে। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”💥 এটা পাকিস্তান নয়… এটা cpim শাসিত কেরালা – ভারত! গতকাল, মুসলিম মহিলা যাত্রীরা বলেছিলেন যে তারা বোরকা ছাড়া হিন্দু মহিলাদের বাসে উঠতে দেবেন না! 😡 এখন হিন্দু মহিলারা কেবল মাথা ঢেকে গণপরিবহনে উঠতে পারবেন! আর লজ্জার বিষয় হল—কোনও মিডিয়া তা দেখাচ্ছে না! 🤫 যদি আজ হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ না হয়, তাহলে আগামীকাল প্রতিটি রাজ্যে একই পরিস্থিতি বিরাজ করবে! এখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার সময়—হিন্দু এবং ভারত মাতার সুরক্ষার একমাত্র গ্যারান্টি হলেন মোদীজি! 🇮🇳।“ 

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি এই ভিডিওটি ২০২৩ সালের এবং এতে কোনো সাম্প্রদায়িক বিষয় নেই। কেরালার কাসারগড়ে খাঞ্জা ওমেন্স কলেজের ছাত্রীরা বাস তাদের নতুন বাসস্টপে না থামানো নিয়ে প্রতিবাদ করছে।

https://archive.org/details/reel1063339709073373

ফেসবুক পোস্ট 

তথ্য যাচাইঃ    

গুগলের মাধ্যমে জানতে পারি তারা মালয়ালাম ভাষায় কথা বলছেন। তারপর, আমাদের মালয়ালম টিমের সাহায্যে জানতে পারি, তর্ক-বিতর্কের এই ভিডিওতে কোথাও ধর্ম নিয়ে কিছু বলা হয়নি। 

গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভিডিও ভিত্তিক বেশ কিছু সংবাদ উপস্থাপন পাওয়া যায়। উপস্থাপন অনুযায়ী, ভিডিওটি অক্টোবর ২০২৩ সালের, যেখানে কেরালার কাসারগড় জেলার খাঞ্জা মহিলা কলেজের সামনে বাস থামানো নিয়ে কলেজ ছাত্রী, এক মহিলা যাত্রী ও বাস চালকের মধ্যে তর্ক হয়। ঘটনাটি কুম্বলা-মুল্লেরিয়া রোডের ভাস্কর নগরের একটি বাসে ঘটে।

ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাসের মধ্যে একটি মোবাইল নম্বরের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

সেই নম্বরের মাধ্যমে সেই বাসের কনডাক্টর হারিশ-এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন,”এই ঘটনা ঘটেছে ২০ অক্টোবর ২০২৩, কেরালার কুম্বলা-মুল্লেরিয়া রুটে চলা একটি বাসে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় জড়িত নয়। যেখান থেকে বাস থামার নির্দিষ্ট কোনও স্টপ ছিল না, সেখান থেকে ছাত্রীদের কয়েকজন হাত দেখিয়ে বাসে ওঠেন। এরপর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, ঠিক তাদের সামনে কি কোনও স্টপ ছিল? এই প্রশ্নেই ছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সেখান থেকেই তর্কের শুরু। পরে ছাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন। ওই মহিলা যাত্রীর বয়সও তারা বিবেচনা করেননি। তারা বলেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে, তবে জানা গেছে, এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। “মুসলিম মেয়েরা বাসে হিন্দু মহিলাদের মাথা ঢাকতে বা বোরকা পরতে বাধ্য করছে”—এই ধরণের যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। আমাদের বাস সাধারণ যাত্রী পরিবহনের জন্য। এখানে পুরুষ-মহিলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক মত ও ধর্মের মানুষ যাতায়াত করেন। তবে আমাদের কাছে সবাই শুধুই যাত্রী। যে কেউ আমাদের বাসে উঠতে পারেন। কোনও যাত্রী অন্য যাত্রীর অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না।“ 

আরও তথ্য জানার জন্য আমরা কাসারগড়ের কুম্বলা থানায় যোগাযোগ করি। থানার একজন অফিসার আমাদের জানান,”ঘটনাটি আমাদের জানা আছে, কিন্তু কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। তাই কোনও মামলা হয়নি। খাঞ্জা ওমেন্স কলেজের (কন্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন) ছাত্রীদের সঙ্গে এক মহিলার বাসে তর্ক হয়। ছাত্রীরা অনেকদিন ধরেই বলছে বাস কলেজের সামনে থামে না। সেদিন তারা বাস থামিয়ে ওঠে। পরে বাসস্টপে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তারা নামবে কি না, তখন তারা রেগে যায়। সেখান থেকেই তর্ক শুরু হয়। এই ঘটনার সঙ্গে ধর্ম বা সাম্প্রদায়িক কিছু জড়িত নয়। যা ছড়ানো হচ্ছে, তা ভুল তথ্য।” 

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরালার কাসারগড় পুলিশের সাইবার শাখা নিজ থেকেই (সুয়ো মটো) একটি এক্স (X) অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ওই অ্যাকাউন্টে বোরকা পরা মহিলাদের ভিডিও নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। মামলাটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারায় রেজিস্টার করা হয়েছে।

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভিডিওটি ২০২৩ সালের এবং এতে কোনো সাম্প্রদায়িক বিষয় নেই। কেরালার কাসারগড়ে খাঞ্জা ওমেন্স কলেজের ছাত্রীরা বাস তাদের নতুন বাসস্টপে না থামানো নিয়ে প্রতিবাদ করছে।

Avatar

Title:কেরালায় এক স্টপে বাস থামানো নিয়ে কলেজ ছাত্রীদের বিক্ষোভের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার

Fact Check By: Nasim Akhtar 

Result: False

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *