
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর এক অফিসার, বিনয় নারওয়াল। ১৬ এপ্রিল বিনয় ও হিমান্সির বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং তাঁরা হানিমুনে ভারতের ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে খ্যাত বাইসারন উপত্যকায় বেড়াতে যান। সেখানেই সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন তাঁরা। ধর্মীয় পরিচয় জানতে পেরে বিনয় হিন্দু বলে জানানোর পরই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বাইসারন উপত্যকায় এক যুগলকে শাহরুখ খানের আইকনিক পোজে রিল ভিডিও করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, যুগলটি হলেন বিনয় নারওয়াল ও তাঁর স্ত্রী হিমান্সি।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”সন্ত্রাসীদের হাতে হ**ত্যা হওয়ার আগে শেষ ভিডিও লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল শেয়ার করেছিলেন…💔 মাত্র 26 বছর বয়স, ৬ দিন আগের সদ্য বিবাহিত। জীবন কতোটা অনিশ্চিত কেউ জানি না আমরা😭।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি দাবিটি ভুয়ো। ইয়াশিকা শর্মা ও আশীষ শেহরাওয়াত নামক এক যুগলের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। ফলস্বরুপ, সংশ্লিষ্ট দাবিকে খণ্ডন করে মুখ্যধারার বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন গুলোতে জানানো হয় যে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া যুগল বিনয় নারওয়াল ও তাঁর স্ত্রী হিমান্সি নন। তারা হলেন, ইয়াশিকা শর্মা ও আশীষ শেহরাওয়াত।
বিনয় নারওয়াল ও তাঁর স্ত্রী হিমান্সির শেষ ভিডিও দাবি করে সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ইয়াশিকা শর্মা ও আশীষ শেহরাওয়াত ইন্টাগ্রাম লাইভে এসে জানিয়েছেন ভাইরাল হওয়া ভিডিও যেটিকে বিনয় নারওয়ালের বলে দাবি করা হচ্ছিল, সেটি আসলে তাঁদেরই। সেই ইন্সটা পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন,” আমরা বেঁচে আছি এবং সাম্প্রতিক একটি ভিডিও নিয়ে কথা বলতে চাই, যা আমরা পোস্ট করেছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অনেক ঘৃণার সৃষ্টি করে যার কারণে আমাদের তা ডিলিট করে দিয়েছি। দুঃখজনকভাবে, সেই ভিডিওটি বিভিন্ন পেজ ও সংবাদমাধ্যম দ্বারা ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে এটি প্রয়াত বিনয় স্যার ও তাঁর স্ত্রীর শেষ ভিডিও। তাঁদের পরিবারকে আমাদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই। আমাদের অনুরোধ, কেউ যদি আমাদের ভিডিওটি ভুলভাবে ব্যবহার করে তাহলে দয়া করে সেই পেজ বা পোস্ট রিপোর্ট করুন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সবচেয়ে হতাশার বিষয় হলো, কিছু নামী সংবাদমাধ্যম ও পেজও যাচাই না করে শুধুমাত্র ভিউয়ের জন্য এমন ভুয়া কনটেন্ট ব্যবহার করছে। এতে করে সংবাদমাধ্যমের উপর আস্থা রাখা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে।“
https://www.instagram.com/reel/DIzKFYCyqkS/?utm_source=ig_web_copy_link
ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো আশীষ শেহরাওয়াত-এর প্রোফাইলের সাথে যোগাযোগ করি এবং ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি বলেন, “আমরা আসলে সেই ভিডিওটি ডিলিট করে দিয়েছি যেহেতু আমরা অনেক ঘৃণার শিকার হচ্ছিলাম।”
তিনি একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় যে ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে। স্ক্রিনশটটি শেয়ার করে তিনি বলেন, “এটাই প্রমাণ যে ভিডিওটি ১৪ এপ্রিল আমাদের ফোন থেকে ধারণ করা হয়েছিল।”
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া যুগল পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার শিকার বিনয় নারওয়াল ও তাঁর স্ত্রী হিমান্সি নন। ভিডিওটিতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা অন্য এক যুগল, আশীষ সেহরাওয়াত ও ইয়াশিকা শর্মা, যাঁরা নিশ্চিত করেছেন যে ভাইরাল ভিডিওটি তাঁদেরই।

Title:না, ভিডিওটি পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার শিকার বিনয় নারওয়াল ও তাঁর স্ত্রী হিমান্সির নয়
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False