
সম্প্রতি একজন পাঠক আমাদের তথ্য যাচাই হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার +919049053770-এ একটি বিজ্ঞপ্তির ছবি শেয়ার করে। দাবি করা হচ্ছে, এই বিজ্ঞপ্তি বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশ জারি করেছে এবং বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সমগ্র বর্ধমান শহর জুড়ে স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট পড়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তির শিরোনামে লেখা হয়েছে “প্রেস বিজ্ঞপ্তি পূর্ব বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশ”
বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে “ • সমগ্র বর্ধমান শহর জুড়ে (নবাবহাট থেকে উল্লাস) পূর্ব বর্ধমান জেলা ট্রাফিক পুলিশের তরফ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এই উন্নতমানের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে হেলমেট বিহীন বাইক চালক, রেড লাইট ভায়োলেশন, স্টপ মার্কিং ভায়োলেশন, ওভার স্পীডিং এবং আরো অন্যান্য যে সমস্ত ট্রাফিক নিয়মগুলি রয়েছে সেগুলি অমান্য করলে আপনার এবং আপনার গাড়ির নম্বর প্লেটের ছবি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কন্ট্রোলরুমে পৌঁছে যাবে এবং আপনার গাড়ির সাথে রেজিস্টার্ড হওয়া মোবাইল নাম্বারে ম্যাসেজের মাধ্যেমে প্রত্যেক নিয়ম অমান্য করার জন্য ৫০০-১০০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।…………”
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। পূর্ব বর্ধমান জেলা ট্রাফিক পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট অতনু ব্যানার্জি জানিয়েছেন, বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশের নামে জারি করা এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়ো। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করার নিয়ম অনুসারেই জরিমানা করা হয়। বর্ধমান শহরে এখনও কোন স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট পড়ার ক্ষমতা সম্পন্ন সি সি ক্যামেরা বসানো হয়নি।

স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট রিডার ক্যামেরা হল এমন প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কামেরা চলন্ত গাড়ির নাম্বার প্লেটের ছবি টুলে নেই। এবং ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই গাড়ির নাম্বার প্লেটের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান সহ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বৈধ কিনা সহ বিভিন্ন তথ্য যাচায় করে নেই। এই প্রযুক্তি হাইওয়ে তে টোল সংগ্রহ ও ট্রাফিকের গতিবিধি নতিভুক্ত করা সহ বেশ কিছু কাজে ব্যাবহার করা হয়। তামিলনাড়ুর ত্রিচি সহ মাদুরাই শহরে এবং বেঙ্গালুরু শহরে এই প্রযুক্তির ব্যাবহার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পূর্ব বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট অতনু ব্যানার্জির সাথে যোগাযোগ করি। তিনি জানিয়েছেন “বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশের নামে জারি করা ভাইরাল এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়ো। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করার নিয়ম অনুসারেই জরিমানা করা হয়। বর্ধমান শহরে এখনও কোন স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট পড়ার ক্ষমতা সম্পন্ন সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি।“
ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ সংক্রান্ত অপরাধ ও জরিমানাঃ
১। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ অমান্য করার অপরাধে জরিমানা- ২০০০ টাকা।
২। কার্যকর এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই যানবাহন চালানো অপরাধে জরিমানা- ৫০০০ টাকা।
৩। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অপরাধে জরিমানা- ২০০০ টাকা।

৪। ভয়ানক ভাবে গাড়ি চালানোর অপরাধে জরিমানা- ৫০০০ টাকা এবং পূর্ব তিন বছরের আগে এই একই অপরাধ করে থাকলে জরিমানা- ১০০০০টাকা।
৫। মানসিক বা শারিরিক অসুস্থ থাকা অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে জরিমানা- ১০০০ টাকা।
৬। সড়ক নিরাপত্তা, শব্দ ও বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মান লঙ্ঘনের অপরাধে জরিমানা- ১০০০ টাকা ও তিন মাসের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স জব্দ করা।
৭। পরিবহন গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার অপরাধে- ২০০ টাকা প্রতি অতিরিক্ত যাত্রী ও যাত্রীদের নতুন বাহনের ব্যাবস্থা করে দেওয়া।
৮। গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্ট ব্যাবহার না করা ও ১৪ বছরের বয়সের আগে গাড়ি চালানোর অপরাধে জরিমানা- ১০০০ টাকা।
৯। দুই চাকার আরোহীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা লঙ্ঘন করার অপরাধে জরিমানা- ১০০০ টাকা।
১০। হেলমেট না পড়ার পরে গাড়ি চালানোর অপরাধে জরিমানা- ১০০০ টাকা ও তিনজনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স রাখার জন্য অপরাধীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
১১। সাইলেন্স জোনে হর্নের ব্যবহারের অপরাধে জরিমানা- ১০০০ টাকা।
অপরাধ ও জরিমানা সংক্রান্ত পুরো তালিকাটি দেখুন এখানে ।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিস্যান্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশের নামে জারি করা ভাইরাল প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়োঃ পূর্ব বর্ধমান জেলা ট্রাফিক পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট অতনু ব্যানার্জি

Title:স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট রিডার সি সি ক্যামেরা কেন্দ্রিক প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়োঃ পূর্ব বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট
Fact Check By: Nasim AResult: False