
সম্প্রতি ‘সংবাদ প্রতিদিন’ নামে সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে। এই প্রতিবেদনের দাবি, “বিহারের প্রাক্তন সাংসদ পাপ্পু যাদব সুশান্ত সিং রাজুপুত ঘটনায় অমিত শাহকে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন সিবিআই তদন্তের জন্য। আর সেই চিঠি যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে গৃহীত হয়েছে এবং অমিত শাহ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে লিখিত জানিয়েছেন সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তের জন্য, সেকথাও জানান তিনি। অতঃপর এবার সুশান্ত অনুরাগীদের মনোবাঞ্ছা সম্ভবত পূরণ হতে চলেছে।“
অন্য আরেকটি পোস্ট একইরকম দাবি নিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা আছে, “এবার ধরা পড়বে আসল রহস্য। আমাদের #স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাননীয় শ্রী #অমিত_শাহ জী কে অসংখ্য ধন্যবাদ।“
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছে এই দাবিটি ভুল এবং ভিত্তিহীন।
তথ্য যাচাইঃ
এই পুরো প্রতিবেদনটির সাথে পাপ্পু যাদবের নাম জড়িত থাকায় আমরা ফেসবুকে তার অফিসিয়াল পেজে যাই। এখানে বলে রাখা ভালো, পাপ্পু যাদবের ভালো নাম রাজেশ রঞ্জন এবং ফেসবুকে এই নামেই তার পেজ রয়েছে। ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো দেখতে পায় এই প্রাক্তন সাংসদ অমিত শাহর চিঠির সাথে যুক্ত একটি বাংলা প্রতিবেদনের লিঙ্ক শেয়ার করেছেন।
ওই আর্টিকেলটি পড়ে আমরা জানতে পারি, পাপ্পু যাদব টুইট করে জানিয়েছেন তিনি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আমিত শাহর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠির উত্তর দিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন তিনি পাপ্পু যাদবের চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে পাঠিয়েছেন।
টুইটার থেকে আমরা সেই টুইটটি খুঁজে পাই। সেই টুইটের সাথে পাপ্পু যাদব তাকে পাঠানো অমিত শাহর চিঠিও শেয়ার করেছেন। হিন্দি ভাষায় লেখা টুইটে তিনি বলেছেন, “অমিত শাহজি আপনি চাইলে এক মিনিটের মধ্যে সুশান্তের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের আদেশ দিতে পারেন, দয়া করে এটা এড়িয়ে যাবেন না। বিহারের গৌরব, চলচ্চিত্র অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্তের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছিলাম। উনি সেই চিঠি সংশ্লিষ্ট দফতরে ফরওয়ার্ড করেছেন।“
টুইটে দেওয়া চিঠিতে অমিত শাহর পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে হিন্দি ভাষায় লেখা আছে, “১৬ জুন, ২০২০, তারিখের আপনার চিঠি পেয়েছি যার মাধ্যমে আপনি যুব ফিল্ম অভিনেতা স্বর্গীয় সুশান্ত রাজপুতে আত্মহত্যার সিবিআই তদন্তের কথা জানিয়েছেন। আপনার পত্রের বিষয়বস্তু কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগের আওতায় পরে। অতএব, এই চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অনুমোদনের জন্য চিঠিটি ফরওয়ার্ড করা হয়েছে।“
অমিত শাহের চিটির মানে হল, তিনি এই চিঠি “কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগের (Department of Personnel and Training)” মন্ত্রালয়ে অর্থাৎ “কর্মী, জন অভিজোগ ও পেনশন মন্ত্রকে (Ministry of Personnel, Public Grievances and Pensions)” পাঠিয়েছেন অনুমোদনের জন্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই চিঠি সিবিআই সংস্থার দপ্তরে পাঠাননি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, “কর্মী, জন অভিজোগ ও পেনশন মন্ত্রকের তিনটি বিভাগের মধ্যে অন্যতম হল কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগ।“
এই কর্মীবর্গ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগ ৯টি দপ্তরের মধ্যে একটি দপ্তর হল সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)।
অর্থাৎ, কর্মী, জন অভিজোগ ও পেনশন মন্ত্রক যতক্ষণ না ওই চিঠি অনুমোদন করবে ততখন পাপ্পু যাদবের চিঠি সিবিআই দপ্তরে যাবেনা।
ফলাফলঃ
তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিগুলি ভুল। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে জন্য অমিত শাহ সিবিআইকে কোনও চিঠি পাঠায়নি। বিহারের প্রাক্তন সাংসদ পাপ্পু যাদবের আবেদন তিনি সিবিআই-এর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক অর্থাৎ কর্মী, জন অভিজোগ ও পেনশন মন্ত্রকে পাঠিয়েছেন।

Title:সুশান্তের মৃত্যুর তদন্তের জন্য সিবিআইকে চিঠি পাঠালেন অমিত শাহ, ভুল তথ্য দিয়ে খবর শেয়ার
Fact Check By: Rahul AResult: False