চলতি মাসের ১০ তারিখে হয়েছে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ভোট এবং ১৩ তারিখেই প্রকাশিত হয়েছে ভোটের ফলাফল। ২২৪টি সিটের মধ্যে ১৩৫টি জয় লাভ করে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করেছে জাতীয় কংগ্রেস দল। ২০২২ সালের প্রথম দিকে কর্ণাটকের উদুপি জেলায় হিজাবকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল অপ্রীতিকর পরিবেশ। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বিজেপি নেতা বি সি নাগেষ নাগেশ কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং রাজ্যের মুসলমানদের অর্থনৈতিক বয়কটের আহ্বান জানিয়েছিলেন। অপরপক্ষে, হিজাব ব্যানের প্রতিবাদের মিছিলের অন্যতম মুখ ছিলেন কানিজ ফাতিমা। এই প্রসঙ্গে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, কর্ণাটকের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেষকে, কানিজ ফাতিমা ১৭৬৬২ ভোটে পরাজিত করেছেন।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” স্যালুট জানাই গনতন্ত্রপ্রিয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের-সাথে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা । কর্ণাটকের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশ-যিনি হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তার নির্বাচনী এলাকার 91% ভোটার হিন্দু সম্প্রদায়ের। এবারের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে সেখানকার কংগ্রেস প্রার্থী একজন মুসলিম মহিলা———কানিজ ফাতিমা। সেখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষ কানিজ ফাতিমাকে 17662 ভোটে জয়ী করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা দিলেন। ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল,আছে,থাকবে জয় মানবতার জয়। জয় গণতন্ত্রের জয়।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। বি সি নাগেষ ’তিপতুর’ বিধানসভা থেকে বিজেপি প্রার্থী এবং কানিজ ফাতিমা ’গুলবার্গা উত্তর’ বিধানসভা থেকে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন। ’তিপতুর’ বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী কে. সাদাকশারির কাছে ১৭৬৬২ ভোটে বিজপি প্রার্থী এবং শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেষ পরাজিত হয়েছেন। অপরপক্ষে, ’গুলবার্গা উত্তর’ বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী কানিজ ফাতিমা, বিজেপি প্রার্থী চন্দু পাতিলকে ২৯৭৯ ভোটে পরাজিত করেছেন।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

তথ্য যাচাইঃ

গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বি সি নাগেষকানিজ ফাতিমার বিধানসভার নাম উদ্ধার করি। জানতে পারি, বি সি নাগেষ ’তিপতুর’ বিধানসভা থেকে বিজেপি প্রার্থী এবং কানিজ ফাতিমা ’গুলবার্গা উত্তর’ বিধানসভার কংগ্রেস প্রার্থী। অর্থাৎ দুজন আলাদা আলাদা বিধানসভার প্রার্থী। সুতরাং, তারা একে অপরকে হারাতে পারেনা। এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে, পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তিপতুর বিধানসভার ফলাফলঃ

এই বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী ছিলেন বি সি নাগেষ, কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন কে সাদাকশারি। জনতা দল এবং আম আদমি পার্টির প্রার্থী ছিলেন যথাক্রমে কে টি শান্তকুমার এবং টি এস চন্দ্রশেখর। বিজেপি প্রার্থী বি সি নাগেষ ভোট পেয়েছেন ৫৩৭৫৩ এবং কংগ্রেসের প্রার্থী কে সাদাকশারি ভোট পেয়েছেন ৭১৪১৫। বাকি দল গুলো তুলনামূলকভাবে কম ভোট পেয়েছেন। স্পষ্ট হয় যে, কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে ১৭৬৬২ ভোটে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী বি সি নাগেষ।

গুলবার্গা উত্তর বিধানসভার ফলাফলঃ

এই বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী ছিলেন চন্দ্রকান্ত বি পাতিল (চান্দু পাতিল) এবং কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন কানিজ ফাতিমা। তারা ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ৭৭৫৫৯ এবং ৮০৫৩৮। অন্যান্য দলের প্রার্থীগুলো তুলনামূলক ভাবে কম ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ, কংগ্রেস প্রার্থী কানিজ ফাতিমা বিজেপি প্রার্থীকে ২৯৭৯ ভোটে পরাজিত করে গুলবার্গা উত্তর বিধানসভার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

২০১১-এর সেন্সাস অনুযায়ী, তিপতুর বিধানসভায় মোট জনসংখ্যা ২২২,৭৪৯ জন। ধর্ম অনুসারে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে ৯১.৩৭% এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে ৭.৮২%।

কর্ণাটক বিধানসভার ফলাফল দেখুন এখানে।

তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে প্রমানিত হয় যে, কানিজ ফাতিমা কর্তৃক কর্ণাটক শিক্ষামন্ত্রীকে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত করার দাবিটি মিথ্যে।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়া। ভোট আধিকারিকদের গাড়িতে থাকা রিজার্ভ ইভিএম মেশিন গ্রামবাসীদের দ্বারা ভেঙ্গে ফেলার ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনঃ কংগ্রেস প্রার্থী কানিজ ফাতিমা শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেষকে পরাজিত করেনি

Fact Check By: Nasim Akhtar

Result: Misleading