
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকানকে ডিএসপি বানানো হল। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাদা পোশাক এবং সাদা হজাব পরিহিত একটি তরুণীকে সারিতে দাড়িয়ে থাকে উর্দি পরা পুলিশ অফিসারদের সাথে পরিচয় করানো হচ্ছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে – দেখুন ফেসবুকের ক্ষমতা, অবশেষে মুসকান নামের সেই ছাত্রীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে বাধ্য হলো ভারতীয় পুলিশ এবং কোর্টের রায় এসছে এখন থেকে হিজাব পড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবেন ছাত্রীরা!!
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছে এই দাবিটি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। নারী দিবস উপলক্ষ্যে একজন ১৪ বছর বয়সী ছাত্রীকে একদিনের জন্য ডিএসপি বানানোর ঘটনাকে হিজাব বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ভারতে এসপি বা ওই জাতীয় পুলিশের পদের যোগ্যতা হিসেবে নুন্যতম ২১ বছর বয়স নির্ধারিত রয়েছে। ভাইরাল ভিডিওর এই মেয়েটিকে দেখেই আমরা বুঝতে পারি তার বয়স ২১শের কম। এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওকে কয়েকটি কি ফ্রেমে ভাগ করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ইংরেজি সংবাদপত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়ার চলতি বছরের ৫ মার্চের একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) এর অনুসন্ধান পাই। সেখানে একটি ভিডিও দেওয়া রয়েছে যার সাথে আমরা ছবিটির হুবহু মিল পাই। ওই প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, “৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক অভিনব উদ্যোগে মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার আধিকারিকরা মালকাপুর তহসিলের জিলা পরিষদ উর্দু হাই স্কুলের ১৪ বছর বয়সী ছাত্রী শাহরিস কানওয়ালকে একদিনের জন্য ডিসট্রিক্ট সুপার ইন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি)-এর পদ দেন।“

স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবেদনের এই ভিডিওটি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলও পেয়ে যাই।
শাহরিস কানওয়াল নাম দিয়ে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার আরেকটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) থেকে জানতে পারি, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সরকারি স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে একদিনের জন্য কালেক্টার ও ডিএসপি হওয়ার সুযোগ দেন বুলধানা জেলার আধিকারিকরা। তাদের মধ্যেই একজন ছিল শাহরিস কানওয়াল।

এরপর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বুল্ধানা শহরের এস পি দিলিপ পাটিলের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি জানিয়েছেন “মার্চ মাসে ‘আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস’ কে কেন্দ্র করে জেলা অফিসার অফিস, জেলা কাউন্সিলের প্রধান কার্যকারি অফিস এবং পুলিশ অফিসার তিন অফিসে ছাত্রদের যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের এক দিন কালেক্টর, সি.ই.ও এস. পি পদে বসানো হয়। ভাইরাল ছবিটি ৪ মার্চ তারিখের। ছবিতে দেখা পাওয়া মেয়েটির নাম শেরিস কভাল। মালকাপুর শহরের শাহরিস কানয়াল নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ছাত্রদের উৎসাহিত করায় আমদের উদ্দেশ্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দাবি ভ্রামকপুর্ন।’
তিনি আরও বলেন, “একজন অফিসার যেভাবে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যায় এবং নতুন জায়গায় তার প্রথম দিন যেভাবে কেটে যায়, একইভাবে শেরিসও পুরো অফিস ঘুরে দেখেন, সব পুলিশ অফিসারের সাথে দেখা করে, তারা কী করেন সে সম্পর্কে তথ্য পাই। অর্থাৎ শেরিস তাদের সঙ্গে দেখা করেন যারা নিয়ে এসেছেন। তাদের কষ্ট এবং তাদের সমস্যার কথা শোনেন। একদিন বয়সী এসপি ছাত্রের জন্য একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেওয়াই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল।“
বুলধানার শিক্ষক ডক্টর শ্রীরাম পানজাদে-এর সহায়তায় আমরা শেরিস কাওয়াল-এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান “আমার পুরো নাম শেরিস কাওয়াল আব্দুল আসিদ এবং আমি মালকাপুর জেলা পরিষদ পাঠশালার দশম শ্রেণীর ছাত্রী। নবম শ্রেণীতে ভালো নম্বর পাওয়ার পর, ২ মার্চ মার্চ আমাদেরকে প্রথমে মলকাপুরের শিক্ষা অফিসার ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকেন। সেখানে তিনি আমাকে মলকাপুর এলাকা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তারপরে আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। এরপর ৪ মার্চ আমার স্কুলের শিক্ষক এবং আমি বুলধানায় যাই, সেখানে প্রথমে বুলধানার শিক্ষক এবং তারপর এসপি স্যার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আমাদের বুলধানার কালেক্টর ম্যাডামের সাথেও দেখা করা হয়েছিল, তারপরে আমাকে একদিনের জন্য বুলধানার এসপি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং আমাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল।”
শেরিস আমাদের জানায় কীভাবে তাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল এবং এস পি হিসাবে সে কী করেছিল। সে বলে , “আমি এসপির অফিসে পৌঁছানোর সাথে সাথে আমাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়, সম্মান দেওয়া হয় এবং তারপরে সমস্ত পুলিশ সুপারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দেখলাম ২-৩ জনের মামলা হয়েছে এবং সব পুলিশ সুপার আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন।“
নিষ্কর্স: তথ্য যাচাই করার পর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো নারী দিবস উপলক্ষ্যে একজন ১৪ বছর বয়সী ছাত্রীকে একদিনের জন্য ডিএসপি বানানোর ঘটনাকে হিজাব বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:মহারাষ্ট্রে নারী দিবস পালনের ভিডিওকে হিজাব বিতর্কের সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Rahul AResult: False