
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পঞ্চম শ্রেণী থেকে স্কুলে গীতা আবশ্যক বিষয় ঘোষণা করলো নেদারল্যান্ডস সরকার। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে অনেকগুলি মেয়ে হাতে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ভগবদ গীতা নিয়ে একটি জায়গায় বসে রয়েছেন। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “নেদারল্যাণ্ডের মোট জনসংখ্যা 1 কোটি 70 লক্ষ। সেখানে হিন্দু মাত্র 2 লক্ষ 15 হাজার! অথচ সরকার আইন প্রণয়ন করে পঞ্চম শ্রেনী থেকে “গীতা” পড়া বাধ্যতামূলক করলো!! কারণ গীতা পরলে মানসিক বিকাশ ঘটবে। ❣️❣️❣️❣️।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। নেদারল্যান্ডস সরকার গীতা বাধ্যতামুলক বিষয় হিসেবে ঘোষণা করে কোনও আইন পাশ করেনি।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথম আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। ফলাফলে কোনও যথাযথ তথ্য় পাওয়া যায় না। এরপর নেদারল্যান্ডসের সরকারের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান শুরু করি। ওই দেশে স্কুলে কি কি বিষয় আবশ্যক তার একটি তালিকা দেখতে পাই।
এই বিষয়গুলি হল
- ডাচ
- ইংরেজি
- গণিত
- সামাজিক এবং পরিবেশবিদ্যা (ভূগোল, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, নাগরিকত্ব, সড়ক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক অধ্যয়ন সহ)
- সৃজনশীল অভিব্যক্তি (সঙ্গীত, অঙ্কন এবং হস্তশিল্প সহ)
- খেলাধুলা
স্কুলে আবশ্যক পাঠ্য বিষয়ের এই তালিকায় ‘গীতা’র কোনও উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এই ওয়েবসাইট থেকেই জানতে, প্রায় সমস্ত বেসরকারি স্কুলগুলিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে আবশ্যক হিসেবে পড়ানো হয় যদিও আইন অনুযায়ী সরকারি স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় না। অভিভাবকরা চাইলে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে কোন ধর্মীয় বিষয় পড়ানোর আবেদন করলে স্কুলের তরফে তার ব্যবস্থা করা হয়।

১ কোটি ৭১ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ নেদারল্যান্ডস। ‘হিন্দুইজম ইন দি নেদারল্যান্ডস’ নামের উইকিপিডিয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই দেশে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যা দেড় লক্ষ থেকে দুই লক্ষ।
দি হিন্দু পার্সপেক্টিভ’ নামে একটি ওয়েবসাইটের ২০১৩ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানতে পারি নেদারল্যান্ডসে হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ থেকে দুই লক্ষ। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ‘হেগ’ শহরের বাসিন্দা। দেশে সরকারি অনুদান প্রাপ্ত মোট পাঁচটি হিন্দু প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই স্কুলগুলি হিন্দু সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত হয় এবং জাতীয় স্কুল হিসাবে বিবেচিত হয়। দেশের অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো একই পাঠ্যক্রম শেখানো হয়।

পোস্টে দেওয়া ছবিটিকে গুগল সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পরও কোনও যথাযথ ফল পাওয়া যায়নি। দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালে অন্য একটি দাবির সাথে এই ছবিকে ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছিল। এই ছবি ঠিক কোথাকার তার সঠিক অনুসন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। নেদারল্যান্ডস সরকার গীতা বাধ্যতামুলক বিষয় হিসেবে ঘোষণা করে কোনও আইন পাশ করেনি।

Title:না, নেদারল্যান্ডস সরকার গীতা বাধ্যতামুলক বিষয় হিসেবে ঘোষণা করেনি
Fact Check By: Nasim AResult: False