পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ নিয়োগের তালিকায় শুধু মুসলিমদের নাম? পড়ুন সত্যতা যাচাই

False Political

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা আবহ এবং এই বেকারত্বের সময়ে সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফল সোশ্যাল মিডিয়ায় এক রকমের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ভালো আলোচনা নয়, ভিত্তিহীন আলোচনা যার সূত্রপাত হয় কিছু বিভ্রান্তিকর পোস্ট থেকে। ফেসবুকে নিয়োগের একটি তালিকা শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ নির্বাচিত প্রার্থীর বেশিরভাগই মুসলিম। সন্দিপ সামন্ত নামে একজন উইজার দুটি তালিকার ছবি শেয়ার করে এই দাবি করেন। 

পোস্টের প্রথম ছবিটির তালিকার পাশে আলাদা ভাবে লেখা রয়েছে, “আমার অনেক পরিচিতি মননিয়া ভক্তদের বলতে দেখেছি আমরা সেকুলার, তাই বিজেপি যারা করা তারা কট্টরপন্থী আর এস এস। তা আমার মহাজ্ঞ্যানি অতীব বুদ্ধিমান সেকুলার পরিচিতিদের কাছে জানতে চাই এই যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের লিস্ট বেরিয়েছে, এটা কি সেকুলার এর পরিচয়? উত্তরটা দিলে ভালো হয়।” দ্বিতীয় ছবিতে শধুমাত্র নামের তালিকা রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে “ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এ নিয়োগ 50 জনের মধ্যে 2 জন হিন্দু…. বাকিরা মুসলিম….।”

তথ্য যাচাই করে জানতে পারি পোস্টে করা দাবিটি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মোট ১০টি তালিকার মধ্যে শুধুমাত্র ‘ওবিসি-এ’ শ্রেণির তালিকাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে। 

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

তথ্য যাচাই    

পোস্ট করা দুটি তালিকা ভালোভাবে লক্ষ করতে দেখা যাবে দুটির ওপরেই লেখা রয়েছে ‘ওবিসি – এ’ অর্থাৎ, এগুলি ‘ওবিসি – এ’ শ্রেণিভুক্ত নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা। 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে এরপর আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের (WBPRB) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যাই। ২০১৯ সালে হওয়া পরীক্ষার ফলাফল ১৮ জুন (১৮/০৬/২০২১) তারিখে সামাজিক শ্রেণির ভিত্তিতে মোট ১০টি তালিকায় নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২টি অসংরক্ষিত (UR) তালিকা, ২টি তফসিলি জাতি (SC) তালিকা, ২টি তফসিলি উপজাতি (ST) তালিকা, দুটি ওবিসি – এ (OBC-A) তালিকা এবং দুটি ওবিসি – বি (OBC-B) তালিকা। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় যে দুটি ছবি শেয়ার করা হচ্ছে তাতে মোট ৫০ জনের নাম রয়েছে। ‘ওবিসি-এ’ বিভাগের দুটির একটি তালিকার ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে। নিচে আসল তালিকার ছবি দেওয়া হল যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় প্রথম জনের নাম ‘এস কে মাসুদ’ এবং তালিকার শেষ (৫০ তম) জনের নাম ‘জামিনুল ইসলাম’। ভাইরাল ছবিতেও প্রথম এবং শেষ স্থানে এই দুজনের নামই রয়েছে।  

এই তালিকার বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর শ্রেণিকে (ওবিসি) দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘ওবিসি-এ’ এবং ‘ওবিসি-বি’। পশ্চিমবঙ্গ ওবিসি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সেন অসীম ব্যানার্জির কথা অনুযায়ী, “যারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে একটু এগিয়ে তারা ওবিসি-বি এবং বাকিরা ওবিসি-এ।” 

সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা কুইন্ট’র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মমতা সরকার ওবিসিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন যেখানে ‘ওবিসি-বি’ হল অনগ্রসর এবং ‘ওবিসি-এ’ হল বেশি অনগ্রসর । এ বিভাগে ১০ শতাংশ এবং বি বিভাগে ৭ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়। 

ওবিসি-এ বিভাগে মোট ৮০টি জাতির তালিকা প্রকাশ করা হয় যার মধ্যে ৭২টি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। ওবিসি -বি বিভাগে মোট ৯১টি তালিকা প্রকাশ করা হয় যার মধ্যে ৩৯টি মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে। ফলস্বরূপ দেখা যায়, ‘ওবিসি-এ’ বিভাগের ৯৭ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। 

প্রতিবেদন আর্কাইভ

এখানে বলে রাখা ভালো, ভারতীয় মুসলিমরা তফসিলি জাতি বা তফসিলি উপজাতি বিভাগে সংরক্ষণ পায় না। ভারতীয় সংবিধানের তফসিলি জাতি নির্দেশ, ১৯৫০ (Constitution (Scheduled Castes) Order) অনুযায়ী, হিন্দু (শিখ এবং বুদ্ধ) ব্যাতিত অন্য কোনও ধর্মালম্বীদের তফসিলি জাতি বলে গন্য করা হবে না। 

স্পষ্টভাবেই বলা যেতে পারে, সোশ্যাল মিডিয়ার দাবিটি ভুয়ো। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে শুধুমাত্র মুসলিমদের নিয়োগ করা হয়নি। অন্যান্য তালিকাগুলিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই বেশি। পশ্চিমবঙ্গের ৯৭% মুসলিম ‘ওবিসি-এ’ শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ‘ওবিসি-বি’ শ্রেণির তালিকায় হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। বলতে গেলে ‘ওবিসি-বি’ শ্রেণির প্রায় সব প্রার্থীই হিন্দু। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিয়োগের মোট ১০টি তালিকার মধ্যে শুধুমাত্র ‘ওবিসি-এ’ শ্রেণির তালিকাকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে

Avatar

Title:পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ নিয়োগের তালিকায় শুধু মুসলিমদের নাম? পড়ুন সত্যতা যাচাই

Fact Check By: Nasim A 

Result: False


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *