
মরদেহ দাহ করার চুল্লির সামনে শাড়ি পরে দাড়িয়ে থাকা একজন মহিলার ছবি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে শেয়ার করে করে দাবি করা হচ্ছে, দাহ করার লোক না থাকায় জয়ন্তী চক্রবর্তি নামের এই মহিলা নিজেই মরা পোড়ানোর কাজে যোগ যোগ দেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশে লাল শাড়ি পরে একজন মহিলা দাড়িয়ে রয়েছে। পোস্টে বলা হচ্ছে, এই মহিলার নাম জয়ন্তী চক্রবর্তী, পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেছেন। করোনা ভাইরাসে মৃতদের দেহ কেউ দাহ করতে এগিয়ে না আসায় তিনি এই দায়িত্ত্ব নেন।
পোস্টের লম্বা ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “ইনি জয়ন্তী চক্রবর্তী, একজন শিক্ষিত ব্রাহ্মণ পরিবারের মহিলা। যিনি ফিজিক্স এ মাস্টার্স (এম.এস. সি)পাস করেছেন চেন্নাই এর ইউনিভার্সিটি থেকে। এনার বাবা তামিলনাড়ুর শিব মন্দিরের পুরোহিত। কিন্তু করোনা আতঙ্কে কেউ কাজ করতে না চাওয়ায় ইনি বৈদ্যুতিক শ্মশানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মৃতদেহ পোড়ান। আসলে মানুষ ধর্মে জাতপাত নয় সবসময় কর্মে বড়ো হওয়া এটাই তার উদাহরণ। কিন্তু ওই যে ধর্মের রঙ্গীন চশমা ধারণকারীরা তো ধান্দার ধনতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজটাকে ক্রমাগত স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে আর প্রতিনিয়ত নিজ ধর্ম রক্ষায় কাজ না করে নিজ ধর্ম হেও করছে । ✊বাঘের পেট থেকে বাঘ ই জন্ম হয় কুকুর নয় – তেমনি ধর্ম রক্ষায় যারা কাজ করে ওরা একেকটা বাঘের বাচ্চা বীর সন্তান আর যারা হিন্দু হয়ে হিন্দু ধর্ম না জেনে বাজে মন্তব্য করে হেও করে ওরা রাস্তার কুকুর ওরা ঘেও ঘেও ই করতে পারে আর কিছু করার ক্ষমতা ওদের নেই। 🙏অন্তর থেকে শত কোটি প্রনাম জানাই আমাদের অন্তিম যাত্রার এই কাণ্ডারীর জন্য🙏।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও অলীক। একজন দাহ কর্মীর ২০১৫ সালের একটি ছবিকে করোনা ভাইরাসের সাথে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে ছবিটিকে গুগল সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে দেখতে বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে ভাইরাল ছবিটি দেখতে পাই। তামিল সংবাদ মাধ্যম ‘ভিকাতান’র ২০১৫ সালের ৫ মে তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি ছবির এই মহিলার নাম জয়ন্তী। তিমি এই ‘ভিকাতান’কে ২০১৫ সালে সাক্ষাৎকার দেন। এই প্রতিবেদনে তারই উল্লেখ পাওয়া যায়। ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তামিল আমাদের অনুবাদ করেন জানান,
নামাক্কাল জেলার কুলপট্টী গ্রামে এক ব্রাহ্মণ ঘরে জয়ন্তীর জন্ম। পরিবাবের সব থেকে ছোট মেয়ে হওয়ায় সব থেকে আদরের ছিলেন তিনি। পড়াশোনা করে শেষ করে কলা বিভাগে স্নাতকোত্তর (MA) ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর প্রেম করে অন্য ধর্মের একজনকে বিয়ে করায় পরিবারের সাথে দুরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে বাবা তাকে মেনে নেন। এরপর জয়ন্তীর বাবা মারা যান। জয়ন্তী নিজেই বাবার শব দাহ করেন। এরপর ২০১৩ সালে পরিবারকে আর্থিক দিক থেকে সবল করতে তিনি নামাক্কাল পুরসভার বাগান মালি হিসেবে কাজে যোগ দেন। তিন মাস পর নামাক্কাল পৌরসভা ও ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর যৌথ উদ্যোগে চালু করা বৈদ্যুতিক চুল্লি কেন্দ্রে দাহ কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে ২০১৫ সালে তামিল ভাষায় লেখা ক্যাপশনের সাথে এই ছবিকে কাধনবাম নামে একটি পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনকে ট্রান্সলেট করে দেখা যায় প্রতিবেদনে বর্ণিত কথাগুলোই লেখা রয়েছে।

‘এমএমলোগো’ নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের ২০১৬ সালের ১৬ অগস্ট’র প্রতিবেদনে এই ছবি দেখতে পাওয়া যাই। এখানেও উপরোক্ত ঘটনাই লেখা রয়েছে। আরও জানতে পারি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয় ললিতা জয়ন্তীকে কল্পনা চাওলা পুরস্কারে সম্মানিত করেন।

অর্থাৎ, স্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে এই ছবির সাথে করোনা ভাইরাসের কোনও সম্পর্ক নেই। ২০১৩ সাল থেকেই জয়ন্তী দাহ কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। একজন দাহ কর্মীর ২০১৫ সালের একটি ছবিকে করোনা ভাইরাসের সাথে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:২০১৫ সালের দাহ কর্মীর ছবিকে করোনার সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context