
চলতি মাসের ১০ তারিখে সম্পন্ন হয়েছে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ভোট এবং ১৩ তারিখেই প্রকাশিত হয়েছে ভোটের ফলাফল। ২২৪টি সিটের মধ্যে ১৩৫টি জয় লাভ করে সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করেছে জাতীয় কংগ্রেস দল। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ফেসবুক, টুইটার সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বেশ ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কর্ণাটকে কংগ্রেসের বিজয় উদযাপনের সময় পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানো হয়েছে। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার এক মোড়ে তারকা যুক্ত সবুজ রঙের পতাকা উত্তলিত করছে এক যুবক। তার সাথে উড়তে দেখা যাচ্ছে জাফরান রঙের একটি পতাকা, নীল রঙের একটি ও এক ব্যাক্তির ছবিযুক্ত একটি ভারতের জাতীয় পতাকা। অন্য পোস্টের দাবি করা হয়েছে- কংগ্রেস পার্টির মুসলিম সমর্থকরা জাফরান পতাকাকে ইসলামী পতাকা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” এই ভিডিওটা পাকিস্তানের নয় ভারতবর্ষের। কর্নাটকে কংগ্রেস জেতার পর পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে লাফালাফি করছে। পাকিস্তান কেন বারবার হামলা করবে না যেখানে ভারতবর্ষে এত দেশদ্রোহীরা লুকিয়ে আছে।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সবুজ রঙের পতাকাটি পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়। কংগ্রেসের বিজয় উদযাপনের সময় পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানো হয়নি।
তথ্য যাচাইঃ
ভিডিওটির প্রতি গভীর পর্যবেক্ষণ পোস্টের দাবিটিকে মিথ্যে প্রমান করে। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া পতাকায় দেখা যাচ্ছে, সবুজ রঙের পটভূমিতে রয়েছে সাদা রঙের অর্ধ চন্দ্র ও চন্দ্রের মাঝে অবস্থান করছে একটি তারকা যা উলম্ব পতাকার বামদিকে ঘুরে রয়েছে।
অপরদিকে, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় রয়েছে গাঁড় সবুজ রঙের পটভূমি এবং পতাকার একদম বামদিকে উলম্ব বরাবর রয়েছে সাদা রঙের ডোরা। তাছাড়াও, পটভূমিতে থাকা অর্ধ চন্দ্র ও তারকা চিহ্নদ্বয় পতাকার ডানদিকে ঘুরে থাকে। যা পোস্টের ভিডিওতে দেখতে পাওয়া পতাকার সাথে বৈসাদৃশ্যের সৃষ্টি করে।
নীচে পোস্টের ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সবুজ পতাকা ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার তুলনামূলক ফ্রেমটি দেখুনঃ

উত্তর কান্নাড়ার এসপি বিষ্ণুবর্ধন এন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভিডিওতে যে পতাকা দেখা যাচ্ছে সেটি ধর্মীয় পতাকা, পাকিস্তানি পতাকা নয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে এটি পাকিস্তানের পতাকা নয়।
ভিডিওটি কোথাকার ?
কর্ণাটকের উত্তর কন্নড় জেলার উপকূলীয় শহর ’ভাটকাল’-এর শামসুদ্দিন সার্কেল মোড়ে পতাকা উত্তোলনের এই ঘটনাটি ১৩ মে তারিখে ঘটেছে।
জাফরান পতাকাকে অন্য পতাকা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ?
ভাটকাল পুলিশ আমাদের জানিয়েছেন,”উদযাপনের সময় কোনো ধর্মীয় পতাকার অপসারণ বা অন্য ধর্মের পতাকা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়নি। কোন প্রকার অঘটন ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় উদযাপন করা হয়েছে।
১৩ মে ভোট গণনার সময় যখন থেকে কংগ্রেস প্রার্থী ’মানকাল বৈদ্য’-এর ভোটে এগিয়ে থাকার খবর বাইরে এসছিল তখন থেকেই কংগ্রেস সমর্থকরা শামসুদ্দিন সার্কেলে জমা হতে শুরু করেছিল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় পতাকা উত্তোলিত করতে শুরু করেছিল। তারা প্রথমে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলিত করে এবং তারপরে ডক্টর বি.আর. আম্বেদকরের মুখমণ্ডল যুক্ত নীল রঙের পতাকা রঙের পতাকা উত্তোলিত করতে শুরু করেছিল।

এমন কিছু ছবি, ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে যেখানে চার ধরনের পতাকা- জাফরন, নীল, সবুজ ও কংগ্রেসের পতাকা একসাথে মোড়ের সেই বৃত্তে উড়ছে। এরম পোস্টকারী একজনের আমরা কথা বলি। তিনি আমাদের বলেন- কংগ্রেস প্রার্থী মানকাল বৈদ্যের বিজয় উদযাপন করতে সমস্ত ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সমর্থকরা শামসুদ্দিন সার্কেলে একত্রিত হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের সমাপ্তির পরে সমস্ত পতাকা নামিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পতাকা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ঘটেনি।

জানিয়ে রাখা ভালো যে, সমগ্র ইসলামিক বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো একক ইসলামি পতাকা নেই। যাইহোক, সবুজ রং, অর্ধচন্দ্র এবং তারা সাধারণত ইসলামের সাথে যুক্ত বলে অনেকে মনে করে। উত্তরপ্রদেশ শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি যিনি ইসলাম ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, একটি অর্ধচন্দ্র ও তারা সহ সবুজ পতাকা ভারতে নিষিদ্ধ করার জন্য ২০১৮ সালে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন এবং যুক্তি যুক্তি দিয়ে যে এটি ‘অ-ইসলামিক’।
নিষ্কর্ষঃ
তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়া। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সবুজ রঙের পতাকাটি পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়। কংগ্রেসের বিজয় উদযাপনের সময় পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানো হয়নি।

Title:কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনঃ কংগ্রেসের বিজয় উদযাপনের সময় পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানো হয়নি
Fact Check By: Nasim AResult: False