
নারীবিদ্বেষ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটি ইটে রয়েছে। আর সেই নারী যদি আধুনিক চিন্তাধারার এবং বাম ভাবাদর্শে বিশ্বাসী হয় তবে সেখানে আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই একটি লজ্জাজনক ঘটনা দেখা যাচ্ছে। একটি সম্পাদিত ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি মেয়ে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে আছে এবং তার প্ল্যাকার্ডের ওপর লেখা রয়েছে, “শাড়ি কাপড় খুলে দেব তাও Documents দেবো না, NONRCCAANPR)”। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে,
“শাড়ি কাপড় খুলে দেবে তবুও এরা নিজের পরিচয়ের বৈধ কাগজপত্র দেখাবে না!! তবে কি এরা অবৈধ বাপের সন্তান তাই এত ভয়?!! আগেও বলেছি, আবারও বলছি সিপিএম সহ কমরেড বামপন্থী মানেই হলো সাইকোপ্যাথ। সোজা কথায় সাইকো ও বিকৃতমনষ্ক, বিকৃতকামী না হলে বামপন্থী মাকু হওয়া যায় না। বামপন্থী, কমরেড, মাকু ইত্যাদি মানেই হয় “#বিক্রিত” নয় তো “#বিকৃত”।“
পোস্টের ভাষা দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কারা ‘বিক্রিত’ এবং ‘বিকৃত’।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। প্ল্যাকার্ডের ছবিতে আসলে লেখা রয়েছে, “শাড়ি কাপড় খুলবো না Documents দেবো না, NONRCCAANPR)”। ভাইরাল হওয়া ছবিটি সম্পাদিত।


তথ্য যাচাই
ছবিটি দেখেই আমরা বুঝতে পারি এটি সম্পাদিত কারন দ্বিতীয় লাইনে যেখানে ‘খুলে দেবো তাও’ লেখা রয়েছে তার রং এবং লেখার ধরন প্ল্যাকার্ডের বাকি অক্ষরগুলির তুলনায় আলাদা। ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কোনও যথাযথ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন রকম কিওয়ার্ড সার্চ করে একটি ফেসবুকে পোস্টে এর অনুসন্ধান পাই। দীপান্বিতা পাল নামে একজন লিঙ্গ সাম্য অধিকারের কর্মী প্ল্যাকার্ড হাতে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেই ছবিকেই সম্পাদিত করে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে। আসল প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে, “শাড়ি কাপড় খুলবো না Documents দেবো না, NONRCCAANPR)”।
দীপান্বিতা পালের প্রোফাইলে গিয়ে দেখতে পাই, তার ছবি নিয়ে যে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে এই বিষয়ে তিনি অবগত। এটি যে তার সম্পাদিত ছবি এই মর্মে তিনি একটি পোস্টও করেছেন। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন কিভাবে তার ছবিকে সম্পাদিত করে তাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। তার পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন,
আসলে ধর্ষকের চোখ তো, স্বাভাবিকভাবেই “না” কে “হ্যাঁ” দেখেছে। ভারতে CAA-NRC-NPR বিরোধী আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই এদেশের রুপান্তরকামী মানুষজন তৎকালীন Transgender Bill এর বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছেন। অধুনা Transgender Bill জানায় যে রুপান্তরকামী মানুষজন দের এবার সরকারি প্রতিনিধি ও ডাক্তারদের সামনে জামাকাপর খুলে প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা Transgender। ভাবতে পারবেন আমি বা আপনি একদল অচেনা মানুষের সামনে নগ্ন অবস্থায় অবনত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি যাতে তাঁরা শরীর ছুঁয়ে যাচাই করে নিতে পারে আমরা “ভান” করছি কিনা? পারবেননা, কারণ আপনাদের শরীর দামি, রাষ্ট্রের হাতের খেলনা নয় (এখনো অবধি)। প্রথমত যে রাষ্ট্র মনে করে তার নাগরিকদের উলঙ্গ করে, তাঁর শরীর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে তাকে তাঁর লিঙ্গপরিচয় নির্ধারণ করে দেবে, সেই রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদী ও ধর্ষকামী। দ্বিতীয়ত Transgender মানুষ মাত্রই তার শরীরে কোন পরিচায়ক চিহ্ন থাকবে এরম ধারণা সম্পূর্ণ ভুয়ো ও অবৈজ্ঞানিক। এহেন আপামর মূর্খ ও ট্রান্সফোবিক রাষ্ট্রের প্রান্তিক ও অত্যাচারিত Transpersons স্বাভাবিকভাবেই CAA-NRC-NPR এর মত একটি আদ্যন্ত সংখ্যালঘু নির্মূলকারী আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। Detention Camp এ যে সবার আগে তাঁরাই পৌঁছাবেন এবং পাশবিক নির্যাতনের শিকার হবেন তা আসামের হালহকিকত জানলেই টের পাবেন। আমি তাঁদের রুখে দাঁড়ানোর বার্তার বাহকটুকু হয়ে এই পোস্টারটি বানিয়ে গেছিলাম। সেই ছবিটি চাড্ডী আইটি সেলের ভাইটিরা B612 এ কাঁচাহাতে নিজেদের ধর্ষক মনের চূড়ান্ত ফ্যান্টাসির বাস্তবায়ন করেছে। দেখে অবাক হলাম না, হাসি পেলো। তাই ভাইটিদের বলে রাখছি যে হ্যাঁ, প্রাণ টুকু নিয়ে নিলেও, কাগজ দেখাবো না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
এরপর তার প্রোফাইলে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একটি ছবি দেখতে পাই। এখানেও তাকে একই প্ল্যাকার্ড হাতে দেখতে পাওয়া যায়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। একজন লিঙ্গ সাম্য অধিকার কর্মীর প্ল্যাকার্ড হাতে একটি ছবিকে সম্পাদিত করে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:আসল প্ল্যাকার্ডে ‘কাপড় খুলবো’ নয় ‘কাপড় খুলবো না’ লেখা রয়েছে
Fact Check By: Rahul AResult: False