
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভুয়ো ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি ক্ষুদিরামের দুষ্প্রাপ্য ছবি। এই ছবির ওপর লেখা রয়েছে, “অনেক দুষ্প্রাপ্য একটা ছবি। ফাঁসি কাঠ থেকে নামানোর পর ক্ষুদিরাম বসুর একটি ছবি।“ ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছে এই দাবিটি ভুয়ো।
ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন একজন ভারতীয়-বাঙালি বিপ্লবী যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাকে গুপ্তহত্যা করার জন্যে বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন, যে ঘটনার ফলে দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয়। আরও জানতে এখানে পড়ুন।
তথ্য যাচাই
ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমজে সার্চ করে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ছবির এই ছেলেটির নাম বাজি রাউত। ‘ইন্ডিয়া টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) অনুযায়ী, “বাজি রাউত হল দেশের সর্বকনিষ্ঠ শহিদ। ১০ অক্টোবর, ১৯৩৮, সকাল ৮ টা, ওড়িশার ভুবন গ্রামে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। প্রতিবাদে থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। বন্দিদের মু্ক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ তাদের কথায় কান না দিয়ে সোজা গুলি চালাতে শুরু করে দেয় নিরীহ গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে। মৃত্যু হয় দু’জনের। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ আরও বাড়ে। বিক্ষোভকারীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। ক্রুদ্ধ জনতার ভয়ে পালানোর চেষ্টা করে পুলিশ। নীলকন্ঠপুর ঘাট হয়ে তারা ঢেঙ্কানলের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ অক্টোবর তারা নীলকন্ঠপুর ঘাটের দিকে রওনা দেয়। ব্রাহ্মনি নদী পার হয়ে যেতে হবে তাদের। সেইসময় একটি নৌকায় গার্ড ছিলেন কিশোর বাজি রাউত। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে নির্দেশ দেয় নদী পার করে দেওয়ার। তার আগেই অবশ্য ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে গ্রামবাসী হত্যার ঘটনার পৌঁছেছে তাঁর কানে। তিনি এও জানতেন যে, জনতা ক্ষুব্ধ এবং ব্রিটিশদের যেভাবেই হোক আটকাতে হয়ে। সুতরাং লালপাগড়ির প্রস্তাবে সরাসরি না করে দিলেন বাজি। ব্রিটিশরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিল। কিন্তু অকুতোভয় বাজি কানও দিলেন না পুলিশের কথায়৷ কোনও অবস্থাতেই যখন তাঁকে রাজি করানো গেল না, তখন বন্দুকের বাট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে এক পুলিশ। মাথায় ব্যাপক আঘাত পেলেন ১৩ বছরের এই কিশোর। পড়ে গেলেন তিনি। উঠে দাঁড়ালেন আবার। জোর গলায় পুলিশকে বললেন ফিরে যেতে। তিনি পার করে দিতে পারবেন না। অন্তত তিনি বেঁচে থাকতে সেটা সম্ভব নয়। এরপরই ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি চালাতে শুরু করে। বাজি রাউত সহ তাঁর সঙ্গী লক্ষণ মালিক, ফাগু সাহু, রুশি প্রধান ও নাটা মালিকের মৃত্যু হয়।“
গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে উড়িষ্যা সরকারের ওয়েবসাইটে বাজি রাউতের এই ছবিটি পাওয়া যায়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। দেশের সর্বকনিষ্ঠ শহিদ বাজি রাউতের ছবিকে ক্ষুদিরামের ছবি বলে শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:কনিষ্ঠতম শহিত বাজি রাউতের ছবিকে ক্ষুদিরামের ছবি দাবি করে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার
Fact Check By: Rahul AResult: False