
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ত্রিপুরা হিংসায় ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কোরান পোড়ানো হয়েছে। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুজন যুবক কয়েকটি পুড়ে যাওয়া বই হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভালো ভাবে লক্ষ করলে বোঝা যাচ্ছে তাদের হাতে মুসলিম ধর্মের পবিত্র বই কোরান সহ অন্যান্য ধর্মীয় বই রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “😭 #ত্রিপুরাতে এই সকল দৃশ্য দেখে মুসলমানরা কীভাবে থেমে থাকবে বল তোরা, কীভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে বল তোরা,তোরা মার আমাদেরকে তবুও আমরা সহ্য করবো কিন্তু আমাদের ধর্মগ্ৰন্ত কে আগুন দিয়ে পুড়ে দিবে এটা আমরা কীভাবে মেনে নেবো বল তোরা, এরপরও আমরা কথা বলিনা সম্প্রীতি চাই ভ্রাতৃত্ব বন্ধন চাই,,এর পর ও একটি কথা না বলে পারছিনা শুনে রাখ অতি বাড়াবাড়ি করে কেও ঠিকে থাকতে পারেনি আর পারবেওনা। রশি যতই মজবুত হোক একদিন ঠিকই ছিড়ে যায় আর বললাম না। #TripuraMuslimsUnderAttack #SaveTripuraMuslims #savetripuramasjid।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। নয়াদিল্লির কাঞ্চন কুঞ্জে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ছবিকে ত্রিপুরার ঘটনা দাবি করে দাবিতে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে দুর্গা প্রতিমার পায়ে ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর আসের ওই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই আক্রমনের বিরুদ্ধে ভারতের অনেক জায়গায় প্রতিবাদ সভা হয়। ২১ অক্টোবর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-এর নেতৃত্বে ত্রিপুরার গোমতী জেলায় এক বিক্ষোভ প্রদর্শনের মিছিল হিংসাত্মক রুপ ধারন করে যার জেরে বেশ কিছু বাড়ি, দোকান ও মসজিদে হামলা করা হয়। এরপর ২৬ তারিখ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর নেতৃত্বে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় এবং সেখানেও বিক্ষোভকারীদের কিছুসংখ্যক লোক রোয়া বাজারে কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে এবমহ কয়েকটি দোকান ও মসজিদে আক্রমণ করে। ৩০ অক্টোবর লক্ষিপুর এবং কইলাশহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ ইঞ্জিনে সার্চ করি। ফলাফলে স্বাধীন সাংবাদিক ও গবেষক আসিফ মুজতাফা-এর টুইটার হ্যান্ডলে থেকে পোস্ট করা একটি টুইটে এর অনুসন্ধান পাই। ২৮ অক্টোবর, ২০২১, তারিখে পোস্ট করা এই টুইটে মোট তিনটি ছবি শেয়ার করা হয় যার দ্বিতীয় ছবিটিকেই বর্তমানে ভাইরাল করা হচ্ছে। টুইটের ক্যাপশনের মাধ্যমে তিনি জানান, ছবিটি ত্রিপুরার নয় বরং ছবিটি নয়াদিল্লির কাঞ্চন কুঞ্জে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার। সেই টুইটের রিপ্লাইয়ের মাধ্যমে তিনি জানান এই ছবিগুলর চিত্রগ্রাহক এমডি মেহেরবান।
আরও দেখতে পাই, ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি আসিফ মুজতাফা-এত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে চলতি বছরের ১৩ জুন তারিখে পোস্ট করা হয়েছে।
তার ইন্সতাগ্রাম প্রোফাইলে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাই। ভিডিওটি ১৭ জুন, ২০২১, তারিখে পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, এই তিনটি ভিডিও চার দিন আগের রোহিঙ্গা সংকটের ঘটনা।
এই সুত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদ মাধ্যম ‘এনডি টিভি’-এর ২০২১ সালের ১৩ জুন তারিখের প্রতিবেদনে এই অগ্নিকান্ডের বিস্তারিত বিস্তারির খবর জানতে পারি। ১২ জুন রাতের ১১: ৫৫ মিনিটের সময় রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন লাগে । এই দুর্ঘটনায় ৫০টি অস্থায়ী ঝুপড়ি ও ২৭০ জন বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে যায়। এই আগুনে বেশিরভাগই বাসিন্দাই তাদের সমস্ত সম্পত্তি হারিয়েছে, যার মধ্যে শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের দেওয়া কার্ডের মতো পরিচয়পত্রও রয়েছে। (আর্কাইভ প্রতিবেদন)
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। নয়াদিল্লির কাঞ্চন কুঞ্জে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ছবিকে ত্রিপুরার ঘটনা দাবি করে দাবিতে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:দিল্লীর রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ছবিকে ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: False