
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মার্কিন কারাগারে বন্দি পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী ডাঃ আফিয়া সিদ্দিকী মারা গিয়েছেন। পোস্টে একটি হিজাব পরিহিত মেয়ের ছবি রয়েছে এবং একটি লম্বা ক্যাপশন লেখা রয়েছে।
ক্যাপশনে আফিয়া সিদ্দিকার মার্কিন সেনার হাতে ধরা পরার ঘটনার একটি বিবরণ দেওয়া রয়েছে যার একটি অংশ হল, “আফিয়া সিদ্দিকাই কিডন্যাপ হয়েছিল ২০০৩ সালে যার স্থায়িত্ব ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকান টর্চার সেলে এবং সেখানে তার উপড় চলে পাশবিক নির্যাতন,মানসিক নির্যাতন।……………অবশেষে বিদায় নিলেন একজন হাফেজা বিশ্বের একমাত্র নিউরো সাইন্টিস্ট ড: আফিয়া সিদ্দিকা। . ধিক্কার জানাই বিশ্ব মানবতা।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। ভিন্ন মহিলার ছবিকে আফিয়া সিদ্দিকী দাবি করে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।

এর আগেও ২০১৬ সালে, ২০১৯ সালে এবং ২০২০ সালে এই একই ছবিকে একই ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, আফিয়া সিদ্দিকী হলে একজন পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। ২০০৮ সালে আফগানিস্তানের গাজনি প্রদেশে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় একজম মার্কিন সৈন্য এবং FBI এজেন্টকে হত্যা করার চেষ্টার দায়ে তার ওপর আইনি মামলা করা হয়। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১০ সালে একটি নিউ ইয়র্কের কোর্ট ৪৯ বছর বয়সী আফিয়াকে তিনটি হত্যা মামলার দায়ে ৮৬ বছর কারাবাসের সাজা দেয়।
আফিয়া ম্যাসেচুয়েটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) থেকে নিউরোসাইন্সে স্নাতক পাস করে এবং বস্টনের ব্র্যান্ডাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট পাশ করেন। ২০০৩ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন এরপর থাকে ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে দেখা যায়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি। ফলাফলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘আল-জাজিরা’-এর একটি চলতি বছরের ২১ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি কনস্যুলেটের সামনে কয়েক ডজন সমাজকর্মী বিক্ষোভ দেখিয়ে আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির দাবি করে।
এছাড়া আফিয়া সিদ্দিকীর মৃত্যুর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে আরও জানা যায় এই সমাজকর্মীরা বস্টন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে আরও প্রতিবাদ মিছিলের পরিকল্পনা করেছে।

এরপর পোস্টের ছবিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে আরবি সংবাদ মাধ্যম ‘আল-আরাবিয়া’-এর ২০১৫ সালের ২১ মে তারিখের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি সাদা হিজাব পরিহিত এই মহিলার নাম করিমা এল-সেরাফি। তিনি হলেন ইজিপ্টের সামরিক উত্থানে ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসির উপদেষ্টা এবং মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা আমিন আল শেরাফির মেয়ে। ২০১৪ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০১৫ সালে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। স্পষ্টভাবেই প্রমাণ আফিয়া সিদ্দিকীর মৃত্যুর খরটি ভুল।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ভিন্ন মহিলার ছবিকে আফিয়া সিদ্দিকী দাবি করে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।

Title:মার্কিন কারাগারে বন্দি পাকিস্তানি স্নায়ুবিজ্ঞানী আফিয়া সিদ্দিকীর মৃত্যুর খবরটি ভুয়ো
Fact Check By: Rahul AResult: False