
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ৬৩ জন রোহিঙ্গা কিশোর বহনকারী ট্রাক ধরল মহারাষ্ট্র পুলিশ। পোস্টের ভিডিওতে, পুলিশের উপস্থিতিতে একটি ট্রাক থেকে বেশ কিছু নাবালক ছেলেকে নামতে দেখা যাচ্ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,” *এদের বৃহত্তর পরিকল্পনা টা বুঝুন.. 🤨* *মহারাষ্ট্র কোলহাপুরে, আজ দুপুর ২ টায় রুইকার কলোনির (কোলহাপুর) কাছে ৬৩টি রোহিঙ্গা কিশোর বহনকারী একটি ট্রাক ধরা পড়ে।এরা বিহারের বলে দাবি করেছে, কিন্তু তাদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের রেলের টিকিট পাওয়া গেছে..*। *বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের ঢালাও অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তাদের সারাদেশে সাপ্লাই করা হচ্ছে…🧐🥸😡😡*🚩।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ট্রাক থেকে নামতে দেখতে পাওয়া ৬৩জন নাবালক ছেলেদের সবাই ভারতীয়। কিশোরদের এই দলটি পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের। তারা সবাই মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের এক মাদ্রাসার ছাত্র। নিজ নিজ বাড়িতে গরমের ছুটি কাটিয়ে তারা তাদের মাদ্রাসায় ফিরছিল।
তথ্য যাচাইঃ
ভাইরাল এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কিফ্রেমে ভাগ করে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, মুখ্যধারার বিভিন্ন প্রতিবেদনে এই ভিডিওর উল্লেখ পেয়ে যায়।
’টিভি৯ হিন্দি’-এর ১৮মে, ২০২৩, তারিখের প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা হয়েছে, “মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ৬৩ শিশুকে ট্রাকে পাওয়া গেছে, বিহার-বাংলা থেকে মহারাষ্ট্রে আনা হয়েছিল।“
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৩ জন নাবালক ভর্তি ট্রাকটি ধরার পর কিশোরদের কাছে উপস্থিত আধার কার্ড থেকে প্রমান হয় যে তাদের কিছুজনের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ ও বাকিদের বাড়ি বিহার রাজ্যে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা কোলহাপুরের একটি মাদ্রাসার ছাত্র। গ্রীষ্মের ছুটিতে তারা নিজ নিজ গ্রামে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। ছুটি শেষে ফেরার পথে ট্রেন মারফত কোলহাপুর নিকটস্থ স্টেশনে পৌছায় এবং তারপর ট্রাকে করে মাদ্রাসা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

ইন্ডিয়া টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে ১৭ মে তারিখের দুপুর ২ টার দিকে। সমস্ত শিশুর বয়স ছিল ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে যারা বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে ট্রেনে কোলহাপুরে পৌঁছেছিল। স্টেশনে পৌঁছানোর পর কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন পুলিশকে খবর দেয় যে শিশুদের ট্রাকে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, কিশোররা ওই এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়ে। গ্রীষ্মের ছুটিতে সবাই বাড়ি গিয়েছিল। বাড়ি থেকে সবাই মিলে ট্রেনে করে কোলহাপুর স্টেশনে পৌঁছেছিল।

প্রতিবেদন | আর্কাইভ |
কোলহাপুর পুলিশ সুপার মঙ্গেশ চ্যাবনের স্পষ্ট জানিয়েছেন যে শিশুরা বিহার ও বাংলা থেকে এসেছে। তিনি বলেন- ৬৯ জন শিশু ট্রেনে করে বিহার থেকে পুনে এসেছিল। তারপর তাদের পুনে থেকে কোলহাপুরে ট্রাকে করে আনা হয়েছিল। পূর্বাকার কলোনির মহারাজা চকে ট্রাকটি থামানো হয়। এই ট্রাকে ৭ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের দেখে ভারতীয় জনতা পার্টির আঞ্চলিক সদস্য বিজেন্দর মানে ট্রাক চালককে প্রশ্ন করলে টার উত্তর ট্রাক চালক না দিতে পারায় তিনি জেলা পুলিশ প্রধান শৈলেশ বলকোদে জানান এবং শিশু ভর্তি ট্রাকটিকে শিরোলি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুদের তল্লাশির পর সহকারী পুলিশ পরিদর্শক সাগর পাটিল জানান, তাদের কাছে আধার কার্ড রয়েছে। শিশুরা বিহার ও বাংলা থেকে মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়তে এসেছিল। শিশুরা গ্রীষ্মের ছুটিতে কাটিয়ে বাড়ি থেকে মাদ্রাসা ফিরছিল।
অন্যান্য প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানা যায়। প্রতিবেদন গুলো পড়তে ক্লিক করুন এখানে, এখানে, এখানে
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়া। ট্রাক থেকে নামতে দেখতে পাওয়া ৬৩জন নাবালক ছেলেদের সবাই ভারতীয়। কিশোরদের এই দলটি পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের। তারা সবাই মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের এক মাদ্রাসার ছাত্র। নিজ নিজ বাড়িতে গরমের ছুটি কাটিয়ে তারা তাদের মাদ্রাসায় ফিরছিল।

Title:রোহিঙ্গা কিশোর বহনকারী ট্রাক কোলহাপুরের কাছে ধরল মহারাষ্ট্র পুলিশ ? জানুন ভিডিওর সত্যতা
Written By: Nasim AkhtarResult: False