
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে সেটিকে হজরত মহম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র অঙ্কনকারী শিল্পী লার্স ভিল্কসর সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ট্রাক এবং একটি চার চাকা গাড়ি মুখোমুখি দাড়িয়ে রয়েছে। দেখা বোঝা যাচ্ছে দুটি গাড়ির পরস্পরের সাথে ধাক্কা লেগেছিল এবং চার চাকা গাড়িটির অগ্রভাগ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে কায়। ট্রাকের সামনের অংশতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ছবির ওপরেই লার্স ভিল্কসের একটি ছবি দেওয়া রয়েছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “ফেরাউন-নমরুদরাই বেচে থাকার জন্য শতশত সিকিউরিটি রাখে। কিন্তু আল্লাহর সিকিউরিটি না থাকলে এভাবেই নৃশংসভাবে মরতে হয়। ফ্রান্সে মহানবী সা.এর ব্যঙ্গচিত্র আকা ভ্রস্ট শিল্পীর কে শত শত সিকিউরিটি মাঝেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ফি নারে জাহান্নাম- এই মৃত্যুতে পুরো মুসলিম মিল্লাতের মনে ঈদের খুশি বইছে। এ যেনো এক বিজয় ✌️আলহামদুলিল্লাহ ❤️❤️হৃদয়ে মহম্মদ সা.❤️ ❤️।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। ২০১৫ সালের নিউজল্যান্ডের এক সড়ক দুর্ঘটনার ছবিকে অন্য ঘটনার সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, হজরত মহম্মদ হল মুসলিম ধর্মের শেষ নবী। ২০০৭ সালে ফ্রান্সের শিল্পী লার্স ভিল্কস একটি ছবিতে মহম্মদকে চরম নিন্দনীয় ভাবে উপস্থাপন করেছিল। তারপর থেকেই মুসলমান ধর্মালম্বী গোষ্ঠীর নিশানা হয়ে যান লার্স। শিল্পীকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয় অনেক বার। ভিল্কস ২০১০ সাল থেকে সুইডিশ পুলিশ দ্বারা ক্রমাগত সুরক্ষার অধীনে ছিলেন। এমনকি ‘আল-কায়েদা ইন ইরাক’ তার হত্যাকারীকে ১০০০০০ ডলার (৭৪৭৭৪৫০ টাকা) পুরস্কার প্রদান করবে বলে ঘোষণা করেছিল। ২০১৫ সালে, ভিল্কস ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে বাকস্বাধীনতা নিয়ে একটি তর্ক-বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি বন্দুক হামলার নিশানা হয়েছিলেন।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে আমরা ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’-এর একটি প্রতিবেদনে এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী তারিখের এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, এটি আসলে নিউজল্যান্ডের টোকোরোয়া একটি গাড়ি দুর্ঘটনার ছবি। ট্রাকের সাথে গাড়ির সংঘর্ষে মোট তিন জনের মৃত্যু হয়। গাড়িতে ছিলেন হংকং নিবাসী আমেরিকান ওয়ারেন লি পরিবার। ওয়ারেন লি সহ তার স্ত্রী এসন লি এবং কন্যা জুলিয়া লি ঘটনাস্থলে মারা যায়। তাদের ১৮ বছরের ছেলেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কন্যা জুলিয়া লি অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় এবং তাকে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য সাহায্য করতে নিউজল্যান্ডে এসেছিল ওই পরিবার।

সংবাদ মাধ্যম ‘ব্যাংকক পোস্ট’-এর ২০১৫ সালের ৫ মার্চের প্রতিবেদনে থেকেও একই কথা জানতে পারি। ১৭ ফেব্রুয়ারি টোকোরোয়া শহরের কাছে একটি রাস্তায় ট্রাকের সাথে মুখোমুখি গাড়ির ধাক্কা লাগে। সেখানেই মারা যায় লি পরিবারের তিন সদস্য।

অন্যদিকে, চলতি মাসের ৩ তারিখ লার্স ভিল্কস একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিতর্কের মধ্যে থাকায় তার মৃত্যু ভালো এবং খারাপ, দুই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৫ সালের নিউজলিন্ডের এক সড়ক দুর্ঘটনার ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:২০১৫ সালের দুর্ঘটনার ছবিকে মহম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র অঙ্কনকারীর শিল্পীর মৃত্যুর সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context