
কলকাতার একটি ফোটোশুটের ছবি ভুয়ো দাবির সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হচ্ছে। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি তরুনি রিক্সা টানছেন এবং রিক্সাচালক যাত্রীর সিটে বসে আছে। দাবি করা হচ্ছে, যাত্রীর স্থানে বসা ওই রিক্সাচালকটি মেয়েটির বাবা। এবং এই মেয়েটি এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস পরীক্ষায় (আইএএস) প্রথম হয়েছে। পোস্টের এই ছবির ওপরে লেখা রয়েছে, “যে মেয়েটি রিক্সা টানছে সে এবার ইন্ডিয়ান এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস পরীক্ষায় (আইএএস) প্রথম হয়েছে। যাত্রী তার বাবা। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে তার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হয়েছে, তাকে রিক্সায় চড়িয়ে সে শহর প্রদক্ষিণ করে। মেধাবি মেয়েটি তার বাবার ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও সম্মান জানানোর এক অভিনব প্রয়াস।“
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছে এই দাবি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন।
তথ্য যাচাইঃ ছবিটি গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই, দু’বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই ছবিটিকে নিয়ে অনেক সংবাদমাধ্যমই প্রতিবেদনে লিখেছে। ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডোও এই ছবিটির তথ্য যাচাই করেছে। সেখান থেকেই জানতে পারি এই মেয়েটির নাম শ্রমণা পোদ্দার।
এই নাম দিয়ে ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করে মেয়েটির ফেসবুক (আর্কাইভ) অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাই। বায়ো সেকশন থেকে জানতে পারি মেয়েটি পেশায় পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার এবং ব্লগার। তার ‘ফোটোজ’ সেকশনে গিয়ে দেখতে পাই তার ব্যাপারে ছড়িয়ে পড়া এই ভুয়ো দাবি নিয়ে তিনি অবগত। এই দাবিকে ভুল বলে জানিয়ে তিনি একটি লম্বা বিবৃতিও শেয়ার করেছেন। ইংরেজি ভাষায় লেখা এই বিবৃততে বলা হয়েছে,
“সকাল থেকেই জিনিসপত্র একটু উল্টো পাল্টা চলছে। গোয়ায় একটি অনুষ্ঠান থেকে ফিরে এসে জানতে পারি আমার একটি ছবি ভুয়ো দাবির সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রথমে যদিও ব্যাপারটিকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু কুর্নিশ ইন্টারনেটকে। একজন রাজনীতিবিদ এই ছবিটিকে টুইট করার পর, এবং শশী থরুর এটিকে রিটুইট করার পর, এই ছবিটি রীতিমতো সারা দেশে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।“ তিনি আরও অনেককিছু বলে এবং ইন্টারনেটকে দোষারোপ করার পর তিনি লিখেছেন, “ওয়াইল্ডক্র্যাফট এর সহযোগিতায় এই ছবিটা তোলা হয়েছিল যদিও ছবিটির ক্রিয়েটিভে তাদের কোনও হাত নেই।“ তিনি স্পষ্ট করে দেন এই দাবিটি ভুয়ো সঙ্গে জানান তিনি এই ছবিটি ইন্সতাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। তার লিঙ্কও নিচে দিয়ে দেন।
পোস্টে দেওয়া লিঙ্ক থেকে খুব সহজেই ইন্সতাগ্রামে পোস্ট করা এই ছবিটি পেয়ে যাই। এই ছবির ক্যাপশনেও তিনি লিখেছেন যে এই ছবিটি ওয়াইল্ডক্র্যাফট এর সহযোগিতায় এই ছবিটা তোলা হয়েছিল।
ফলাফলঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। ছবির মেয়েটির নাম শ্রমনা পোদ্দার এবং তিনি একজন ‘পাবলিক রিলেশন’ ম্যানেজার ও ব্লগার। এই ছবিটি একটি ফোটশুটের অংশ। তিনি আইএএস পরীক্ষায় প্রথম হননি এবং রিক্সার যাত্রীটি তার বাবা নন।