
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের দ্বিতীয় মহিলা পাইলট সাফিয়া ফিরোজীকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেললো তালিবানিরা। পোস্টে মোট দুটি ছবি রয়েছে যার প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে একটি ধ্বংস স্তুপের মাঝে বোরখা পরিহিত একজন মহিলা রক্তাক্ত এবং ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দাড়িয়ে রয়েছেন। দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন তরুণী একটি প্লেনের ককপিটে বসে রয়েছেন।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “আজ সকালেই আফগানিস্তানের দ্বিতীয় মহিলা পাইলট সাফিয়া ফিরোজীকে পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে ফেলল তালিবানরা।“
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ২০১৫ সালের ফারখুন্দা মালিকজাদা নির্মম হত্যা এবং সাফিয়া ফিরোজীর ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, ইউকিপিডিয়ার ‘মার্ডার অফ ফারখুন্দা মালিকজাদা’ নামের একটি পেজে এর অনুসন্ধান পাই। জানতে পারি ভাইরাল হওয়া এই ছবিটিতে আহত অবস্থায় থাকা এই মেয়েটির নাম হল ফারখুন্দা মালিকজাদা। তার বয়স ২৭ বছর। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরান পুড়িয়ে দেওয়ার সন্দেহে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল শহরে ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ একটি জনতার ভিড় তাকে ঘিরে ফেলে। জনসম্মুখে তাকে গণপিটুনি দিয়ে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়। পরে পুলিশ এই মামলার তদন্ত করে জানায় ফারখুন্দা মালিকজাদা এজাতীয় কিছুই করেননি। শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে তাকে মেরে ফেলা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘সানডে টাইমস’-এর ৭ মে, ২০১৫, তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানা যায়। এই ঘটনার তদন্তে কোরান পোড়ানোর কোনও প্রমান পাওয়া যায়নি। এই নির্মম অমানবিক ঘটনার জন্য ৪৯ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে চার জনের ফাঁসি হয়েছিল এবং আট জনকে ১৬ বছর কারাবাস দেওয়া হয়েছিল। এই ৪৯ জনের মধ্যে ১৯ জন পুলিশ অফিসার ছিল।

সংবাদ সংস্থা ‘আল জাজিরা’-এর ইউটিউব চ্যানেলে ফারখুন্দা মালিকজাদা কেন্দ্রিক একটি ভিডিও উপস্থাপনা খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ২৮ এপ্রিল, ২০১৫, তারিখে আপলোড করা হয়েছে। নিচে দেওয়া বর্ণনায় লেখা রয়েছে, “২০১৫ সালের মার্চ মাসে, একজন আফগান মহিলাকে বিরুদ্ধে কোরান পোড়ানোর ভুল অভিযোগ আনা হয় এবং তারপর তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। তার নাম ছিল ফারখুন্দা। আফগানিস্তানের সমাজকর্মীরা নিশ্চিত করে দেশের কেউ যেন তার গল্প ভুলে না যায়।“
ভিডিওর শুরুতেই ভাইরাল হওয়া ছবিটি দেখা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র সারা দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় নেমেছিল। গণপিটুনির সেই ঘটনাকে নাটকীয় রুপ দিয়েও প্রতিবাদ জানিয়েছিল সমাজকর্মীরা।
দ্বিতীয় ছবিতে থাকা মেয়েটির আসল পরিচয় খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ইংরেজি সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬। তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ভাইরাল পোস্টে থাকা তরুণী হলেন সাফিয়া ফিরোজী। ছবিটি আসলে ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বরের যখন তিনি সশস্ত্র বাহিনীর পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত টার্বোপ্রপ বিমানের পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হন। নিযুক্ত হওয়ার সময় তার বয়স ছিল ২৬ বছর। আফগানিস্তানের বিমান বাহিনীতে দ্বিতীয় নারী পাইলট হল সাফিয়া ফিরোজী। কিন্তু সাফিয়া ফিরোজীকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৫ সালের ফারখুন্দা মালিকজাদা নির্মম হত্যা এবং সাফিয়া ফিরোজীর ছবিকে ভুয়ো দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

Title:আফগান পাইলট সাফিয়া ফিরোজীকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার খবরটি ভুয়ো
Fact Check By: Nasim AResult: False