৯২ বছর বয়সী মৃত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে

False Social

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, হিমালয়ের গুহা থেকে প্রায় ২০০-৩০০ বছর বয়সী জীবিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া রঙের কাপড়ে আবৃত একজন বৃদ্ধ সন্ন্যাসী গোছের লোককে কয়েক জন পুলিশকর্মী ধরে রয়েছে। 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “#গতকাল_রাতে_নেপালের_কিছু আর্কিওলজিস্ট ও নেপাল পুলিশের চালানো সম্মিলিত অভিযানে হিমালয়ের অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলের এক পাহাড়ি গুহা থেকে এই প্রাচীন বৌদ্ধ ভিক্ষুকের শরীর উদ্ধার হয়েছে। মেডিক্যাল টিম পরীক্ষা করে জানিয়েছে যে শরীরের ভেতর প্রাণ এখনো বর্তমান। তবে ফরেনসিক টিমের বক্তব্য অনুযায়ী এই বৌদ্ধ ভিক্ষুক বর্তমানে সজ্ঞানে নেই। ধ্যানরত অবস্থায় তিনি সমাধি লাভ করেছেন, অর্থাৎ শরীরের ভেতর প্রাণ থাকলেও জ্ঞান নেই‌। নেপালের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী এই অবস্থাকে  “দাচোকাবো” বলা হয়ে থাকে। ফরেনসিক টিম আরো জানায় যে এই ব্যক্তির বয়স প্রায় 250 থেকে 300 বছরের মধ্যে হতে পারে। তাদের অনুমান এই ব্যক্তি প্রায় দুশো বছরের ওপর ধরে এইভাবে ধ্যানরত অবস্থায় রয়েছেন।”  

তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ৯২ বছর বয়সী মৃত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর পুরনো ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে। 

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

তথ্য যাচাই 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস নাও নিউজ’-এর ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি তারিখের প্রতিবেদনে এর অনুসন্ধান পাই। এই ছবি কেন্দ্রিক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি সন্ন্যাসী বেশে থাকা এই পৌড় ব্যক্তির নাম লুয়াং ফোর পিয়ান। তিনি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। তিনি ব্যাংককের লোপবুরি মন্দিরে আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে থাকতেন। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর, ৯২ বছর বয়সে তিনি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এবং তার শবদেহ লোপবুরি মন্দিরে সমাধিস্ত করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মের রীতি অনুযায়ী শবদেহের উপর জড়ানো কাপড় বদলানোর জন্য তার দেহকে মৃত্যুর ২ মাস পর কফিন থেকে বের করা হলে দেখা যায় তার মুখে হাসির ভাব ফুটে রয়েছে। (আর্কাইভ প্রতিবেদন)

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’-এর ২২ জানুয়ারি, ২০১৮, তারিখের এই ছবি কেন্দ্রিক প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি। 

ডেইলি মেইল প্রতিবেদন আর্কাইভ 

সংবাদমাধ্যম ‘দি সান-এর ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি তারিখের প্রতিবেদন থেকেও বর্ণনা পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

উপরোক্ত সমস্ত তথ্য এবং যুক্তি থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় ভাইরাল ছবির ব্যক্তির বয়স ২০০-৩০০ বছর নয়, ৯২ বছর। তিনি থাইল্যান্ডের বাসিন্দা, তার সাথে নেপাল বা হিমালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ৯২ বছর বয়সী মৃত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর পুরনো ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:৯২ বছর বয়সী মৃত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ছবিকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে

Fact Check By: Nasim A 

Result: False


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *