সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে সেটিকে ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক হিংসার ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে। ভাইরাল এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিক্ষোভ চলছে এবং রাস্তার ওপর একাধুক আগুনের স্তুপ জ্বলচে। দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচুর লোক এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ত্রিপুরা মুসলমানদের জন্য দোয়া করুন সবাই ভারতের একটি ছোট্ট অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৬ টি মসজিদে আগুন এবং অনেক ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে ত্রিপুরার মুসলিমদের জন্য দোয়া করুন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের উপর বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চলছে মুসলিমদের বহু বাড়িঘর দোকানপাট ও ১২টি মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী ও বজরং দলের লোকেরা কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি পা চাটা গোদী মিডিয়া আর ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর কথা বাদ দিলাম মুসলিম রাজনৈতিক নেতারাও ত্রিপুরা সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি কোথায় আজ বাংলাদেশি চেতনা বাদি দালাল সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নামের কোশিক ভন্ডরা😡।”

তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ২০১৯ সালে আসামের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB) বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলের ছবিকে ত্রিপুরার ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে দুর্গা প্রতিমার পায়ে ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হয়। এরপর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর আসের ওই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই আক্রমনের বিরুদ্ধে ভারতের অনেক জায়গায় প্রতিবাদ সভা হয়। ২১ অক্টোবর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-এর নেতৃত্বে ত্রিপুরার গোমতী জেলায় এক বিক্ষোভ প্রদর্শনের মিছিল হিংসাত্মক রুপ ধারন করে যার জেরে বেশ কিছু বাড়ি, দোকান ও মসজিদে হামলা করা হয়। এরপর ২৬ তারিখ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর নেতৃত্বে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় এবং সেখানেও বিক্ষোভকারীদের কিছুসংখ্যক লোক রোয়া বাজারে কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে এবমহ কয়েকটি দোকান ও মসজিদে আক্রমণ করে। ৩০ অক্টোবর লক্ষিপুর এবং কইলাশহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমাজে সার্চ করি। ফলাফলে ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে এর সন্ধান পাই। জানতে পারি, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর লোকসভা থেকে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (CAB) কেন্দ্র করে দেশজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। পোস্টের ভাইরাল এই ছবিটি আসামের গুয়াহাটির একটি CAB-বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য।

দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদন আর্কাইভ

সংবাদ মাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-এর ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি।

ইন্ডিয়া টুডে প্রতিবেদনআর্কাইভ

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর লোকসভায় পাশ হয় এবং ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি এটিতে স্বাক্ষর করেন।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৯ সালে আসামের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (CAB) বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলের ছবিকে ত্রিপুরার ঘটনা দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:CAB বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলের ছবিকে ত্রিপুরা হিংসার সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল

Fact Check By: Nasim A

Result: False