
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, রামপুরহাট হিংসার পর জেলার ডি এম এবং পুলিশ সুপার অনুব্রত মণ্ডলের সাথে তৃনমূল পার্টি অফিসে পরামর্শ করছেন। পোস্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে তৃনমূল কংগ্রেসের নেতা অনুব্রত মণ্ডলের সাথে একজন উর্দি পরিহিত পুলিশ এবং একজন মহিলা বসে রয়েছেন। তাদের ঘিরে আশেপাশে আরও বেশ কয়েকজন লোক দাড়িয়ে রয়েছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “বীরভূম কান্ডে জেলার ডি এম এবং এস পি কে পার্টি অফিসে ডেকে কেষ্ট মন্ডল এবং গগন সরকার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আর পরামর্শ দিচ্ছেন। এই বাংলার গনতন্ত্র কোথায়?।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ২০২০ সালে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে আয়োজিত শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মন্ত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা সভার একটি ছবিকে রামপুরহাট হিংসার সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচায় করতে আমরা ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে দেখা যায় সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী তার টুইটার হ্যান্ডল থেকে ২০২০ সালে এই ছবিটি শেয়ার করেছে। এই ছবিটি টুইট করে তিনি জানিয়েছিলেন, “বীরভূমের জেলা শাসক ও পুলিশ সুপার দলীয় কার্যালয়ে হাজির। মেরুদন্ডটা বিক্রি করে কি পেলেন? চাকরিটা ছাড়ন ন্যূনতম লজ্জা থাকলে।।”
এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় এই ছবিটি সম্প্রতির নয় এবং এর সাথে রামপুরহাট হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই। এই ছবির আসল উৎস অনুসন্ধান করতে বিভিন্ন রকম প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি।
বীরভূম জেলা পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই ছবি সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘সুজন চক্রবর্তীর টুইটের স্ক্রিনশট’ পোস্ট করে বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়, “গত ০৪/০২/২০২০ তারিখে SRDA চেয়ারম্যান শ্রী অনুব্রত মন্ডল এর বাড়িতে উনার স্ত্রী শ্রীমতী ছবি রানী মন্ডলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অনেক গণ্যমান্য অতিথি এবং মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। উনাদের সুরক্ষার্থে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল যার তদারকিতে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় জেলা সমাহর্তা এবং পুলিশ সুপার, বীরভূম। এই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি নিচের লিংকের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ছবিগুলির থেকে একটি ছবিকে কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট/শেয়ার করে বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছবিটিকে যেভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়, লজ্জাজনক এবং অমানবিক।।“
অর্থাৎ, অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে আয়োজিত তার স্ত্রীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যে সমস্ত মন্ত্রীরা আসবেন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলাকালীন এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করা হয়। অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রী রানি মণ্ডল ২৪ জানুয়াররি, ২০২০, তারিখে মৃত্যুবরণ করেছিল।
বীরভূম জেলা পুলিশের এই পোস্টের ক্যাপশনে বীরভূম জেলার তৃনমূল কংগ্রেসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। এই লিঙ্কে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা মন্ত্রীদের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়ে, “বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের স্ত্রী স্বর্গীয়া ছবি রানী মণ্ডলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।”
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০২০ সালে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে আয়োজিত শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মন্ত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনার সময়ের একটি ছবিকে রামপুরহাট গনহত্যার সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে

Title:রামপুরহাট হিংসাঃ ২০২০ সালের ছবিতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার
Fact Check By: Rahul AResult: False