
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, তালিবান আতঙ্কে দেশ ছাড়ার হিড়িকে মহিলাদের ছেড়ে পুরুষরা পালাচ্ছে। পোস্টে মোট দু’টি ছবি রয়েছে যার মধ্যে প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে একটি প্লেনের ভেতরে অনেকগুলি লোক বসে আছে যাদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরুষ। দ্বিতীয় হৃদয়বিদারক ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বাচ্চা মেয়ে হাতে কিছু বই নিয়ে কাঁদছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “অমৃত হালদারের দেওয়াল থেকে… #copied আফগানিস্তান কি শুধুই পুরুষের দেশ? তালিবানি আতঙ্কে পুরুষদের দেশ ছাড়ার ভিড়| গুটিকয়েক মহিলা ও শিশুকে সঙ্গে এনেছেন কিছু পুরুষ| ভয়ে বিমানবন্দরে পুরুষরা বিমানের চাকা আঁকড়ে ঝুলে পড়ছেন| বিমানের পাশে দৌঁড়চ্ছেন হাজার হাজার পুরুষ| তাঁদের কি মা,স্ত্রী কিংবা সন্তান নেই? কাদের জন্য সেই সব মহিলা-শিশুদের ফেলে রেখে যাচ্ছেন? মহিলা-শিশুরা কি আসবাবপত্র সেখানে? ভাগ্যিস আমাদের একটা বিদ্যাসাগর ছিল| মায়ের জন্য উত্তাল দামোদরে ঝাঁপ ছিল| ভাগ্যিস একটা নেতাজি ছিল| দেশ মায়ের জন্য জীবনখানা নিবেদন ছিল| ভাগ্যিস একটা নজরুল ছিল| মারূপী দেশের জন্য কালো অন্ধকারমাখা গরাদ ছিল| মায়েদের জন্য জীবনখানা উজাড় করে দেওয়া যায় তার শিক্ষা ছিল| সেই শিক্ষাটাই বয়ে চলুক।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। পুরনো দুটি ভিন্ন ঘটনার ছবিকে তালিবান-আফগান পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০ বছর পর, ১৫ অগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যেম আফগানিস্তান দখল করেছে জঙ্গি সংগঠন তালিবান। তারপর থেকেই অশান্ত কাবুল। আতঙ্কে রয়েছে দেশবাসী, কি হবে তাদের ভবিষ্যৎ? দেশ ছাড়ার জন্য হুড়োহুড়ি লেগেছে কাবুল বিমানবন্দরে। বর্তমানে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আফগান কাবুল বিমানবন্দরে উপস্থিত, যারা দেশ ছাড়তে চায়। কারণ তারা ভীত, এখানে থাকলে তালিবানদের নিপীড়নের শিকার হতে হবে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। জানতে পারি প্রথম ছবিটি ২০১৮ সালের এবং দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৬ সালের প্যালেস্তাইনে তোলা।
প্রথম ছবি

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ফলাফলে তুর্কির রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা ‘আন্দলু এজেন্সি’-এর ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিলের একটি প্রতিবেদনে এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। তুর্কি ভাষায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি ছবিতে থাকা লোকগুলো আফগানিস্থানের বাসিন্দা। তারা অবৈধভাবে ট্রেনের চেপে ইরান হয়ে তুরস্ক দেশে অনুপ্রবেশ করে। তুরস্ক সরকার অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ৬,৮৪৬ জনকে প্লেনে চাপিয়ে আফগানিস্তান অর্থাৎ তাদের নিজস্ব দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এটি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে তুরস্ক থেকে আফগানিস্তানগামী প্লেনের ছবি।

সংবাদ মাধ্যম ‘আইরিশ এক্সামিনার’-এর ২০২১ সালের ১৭ অগস্ট স্বাধীন কর্ক সিটির কাউন্সিলর ‘কেন ও’ফ্লিন’-এর এই ছবি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা ভাইরাল ছবিটি ২০১৮ সালের।
দ্বিতীয় ছবি

বই হাতে এই বাচ্চা শিশুর ছবির আসল সত্যতা জানতে ছবিটিকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, গাজা ভিত্তিক চিত্রগ্রাহক ‘ফাদি এ থাবেত’-এর ইন্সতাগ্রাম প্রোফাইলে এই ছবিকে দেখতে পাই। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল পোস্ট করা এই ছবির ক্যাপসনে আরবি ভাষায় লেখা রয়েছে, এটি গাজায় তোলা ফাদি-এ-থাবেতের ছবি।
এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে স্টক ছবির সংস্থা ‘500px’-এর ওয়েব সাইটে ভাইরাল ছবিটি দেখতে পাই। চিত্রগ্রাহক ফাদি এ থাবেত-এর প্রোফাইল থেকে ২০১৬ সালের ১১ মার্চ ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল যায় ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “আমি আমার বই চাই।”

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। পুরনো দুটি ভিন্ন ঘটনার ছবিকে তালিবান-আফগান পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:দুটি পুরনো ছবিকে আফগান-তালিবান পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Nasim AResult: Missing Context