সাঁতারু বুলা চৌধুরীর ছবি যুক্ত করে ভাইরাল হচ্ছে সাঁতারু সায়নি দাসের বিশ্ব বেকর্ডের খবর

Misleading Social

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি গ্রাফিক্স শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে ছবির মহিলাটি হলেন সাঁতারু সায়নী দাস। পোস্টের এই গ্রাফিক্সে ২টি ছবিকে কোলাজ করে পোস্ট করা হয়েছে। প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি মেয়ে সুইমিং স্যুট পরে জলের মধ্যে দাড়িয়ে রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে একটি চলমান জাহাজ এবং একজন সাঁতারুকে জলের ওপরে দেখা যাচ্ছে। গ্রাফিক্সের ওপরে লেখা রয়েছে, “সায়নী দাস যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের প্রচন্ড ঠান্ডা, তীব্র স্রোত,বিশাল ঢেউ আর তিমি-হাঙ্গরের আতঙ্ক উপেক্ষা করে ৩৩ কিমি সাঁতার কেটে ১২ ঘন্টা ৪৬ মিনিটে মহাসাগর অতিক্রম করে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন ২১ বছর বয়সী পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালনার সাহসি মেয়ে সায়নি দাস। আজ বঙ্গ নারীর জন্য গোটা দেশ গর্বিত। অনেক অনেক অভিনন্দন রইল তোমার জন্য।” 

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “বিশিষ্ট সাঁতারু সায়নী দাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের প্রচন্ড ঠান্ডা, তীব্র স্রোত,বিশাল ঢেউ অার তিমি-হাঙ্গরের অাতঙ্ক উপেক্ষা করে ৩৩ কিমি সাঁতার কেটে ১২ ঘন্টা ৪৬ মিনিটে মহাসাগর অতিক্রম করে বিজয়ী হওয়ায় তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।” 

তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন,পদ্মশ্রী এবং অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু বুলা চৌধুরির ছবিকে সায়নি দাস দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।  

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমাজে সার্চ করি। ফলাফলে সংবাদ মাধ্যম ‘দি বেটার ইন্ডিয়া’-এর ওয়েবসাইটে এর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। এই ছবি কেন্দ্রিক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি যুবতীর নাম বুলা চৌধুরী। তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে পাঁচটি মহাদেশের সমুদ্র চ্যানেল সাঁতরে সাফল্য অর্জন করছেন। তিনিই প্রথম নারী যিনি সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন। 

দি বেটার ইন্ডিয়া প্রতিবেদন আর্কাইভ 

সংবাদ মাধ্যম ‘লোকমাত’-এর ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর তারিখের একটি প্রতিবেদনে এবং স্পোর্টস সংবাদ মাধ্যম ‘দি ব্রিজ’-এর একটি প্রতিবেদনেও ভাইরাল ছবির মহিলাকে বুলা চৌধুরী বলে দাবি করা হয়েছে।   

এরপর বুলা চৌধুরীর ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করি। দেখা যায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি তার ‘প্রোফাইল পিকচার’ হিসেবে পোস্ট করা হয়েছে। 

এই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট বলতে পারি পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করা ছবিটি সায়নি দাসের নয়, বুলা চৌধুরীর। 

তাহলে সায়নি দাস কে ? 

সংবাদ মাধ্যম ‘গেট বেঙ্গল’-এর ১১ জুন, ২০১৯, তারিখের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি সায়নি দাস ২০১৮ সালের ৮ জুন মাত্র ১২ ঘণ্টা ৪৬ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে অবস্থিত ৩৩ কিলোমিটার  দীর্ঘ ক্যাটালিনা চ্যানেলকে অতিক্রম করে। ভাইরাল পোস্টের গ্রাফিক্সের ডানদিকের ছবিকেও এই প্রতিবেদনে দেখা যায়। 

দি বেঙ্গল গেট প্রতিবেদন আর্কাইভ 

সাঁতারু সায়নি দাসের এই খ্যাতি বুলা চৌধুরীর নামে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সায়নি দাস সয়ং একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এই ভুয়ো দাবিকে খণ্ডন করেন। তিনি পোস্টে লেখেন, “কয়েকদিন ধরে আমার ক্যাটালিনা চ্যানেলের (2019)  তথ্যের ভিত্তিতে একটি ভুল ফেসবুক পোস্ট ঘুরছে। পোস্টটি তে স্বনামধন্য সাঁতারু শ্রীমতি বুলা চৌধুরীর ছবিকে ব্যবহার করা হয়েছে।যার ফলে আমাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে আমার প্র্যাক্টিসের ফোকাস নষ্ট হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমি আমার আগামী লক্ষ্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মলকাই চ্যানেল (3rd April -13th April 2022)পার করার জন্য কঠিন অনুশীলন করছি। যিনি এই বিভ্রান্তিকর পোস্ট টি করেছেন অবিলম্বে ডিলিট করুন নয়তো আমি আইনি ব্যবস্থা নেবো।”  

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন,পদ্মশ্রী এবং অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু বুলা চৌধুরির ছবিকে সায়নি দাস দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Avatar

Title:সাঁতারু বুলা চৌধুরীর ছবি যুক্ত করে ভাইরাল হচ্ছে সাঁতারু সায়নি দাসের বিশ্ব বেকর্ডের খবর

Fact Check By: Nasim A 

Result: Misleading


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *