
উত্তরপ্রদেশেরে হাথরাশের নির্মম এবং অমানবিক ধর্ষনকান্ডের পর উত্তপ্ত সোশ্যাল মিডিয়া। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রায় সকলেই। এই ঘটনাকে ঘিরে অনেকগুলি ছবি ও ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলি। এগুলির মধ্যে কিছু সত্য এবং বেশ কয়েকটি ভুয়ো পোস্টও রয়েছে। এমনই একটি পোস্টে অন্য একটি মেয়ের ছবি শেয়ার করে তাকে হাথরাসের নির্যাতিতা তরুণী বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে,
“এই করোনা মারন মারামারির বাজারে এক নারকীয় কর্ম কান্ডের সাক্ষী থাকলো উত্তর প্রদেশ। হাতরস জেলায় 14 ই সেপ্টেম্বরের সকাল টা ছিল একটু অন্য রকম মনীষা বাল্মীকি নামের 19 বর্ষীয় এক মহিলা মাঠে কাজ করতে যাচ্ছিল সে দিন । 4জন যুবক রাস্তায় একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করে অনেক চেষ্ঠা করেও সে নিজের প্রাণ বাঁচাতে অক্ষম হয় । দাবি উঠুক ভারতের বাড়ি বাড়ি , রাস্তা ঘাটে দোষীরা যেন শাস্তি পায় । কত দিন চলবে এই রকম নিকৃষ্ঠতম কার্য কলাপ কবে লোপ পাবে পূর্ণভূমি ভারত বর্ষ থেকে ?? #justice4manishabalmiki”

বাংলা ছাড়া আরও বিভিন্ন ভাষায় এই ছবিটিকে একই দাবির সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।

তথ্য যাচাই
পোস্টের ছবির মেয়েটির পরিচয় খুঁজতে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন রকম কিওয়ার্ড সার্চ করে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি। একটি ফেসবুক পোস্ট দেখতে পাই যেখানে বলা হয় এই মেয়েটি হাথরাসের নয়।
Vipin Tiwari নামে এই ফেসবুক ইউজার একটি পোস্ট শেয়ার করে বলেন, ছবির এই মেয়েটি হল তার বন্ধু অজয়ের বোন। গত বছর চন্ডীগড়ের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এরপর আমরা পোস্টে উল্লেখিত বন্ধু অজয় বা অজয় জীতু যাদবের ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে বের করি। ২৯ সেপ্টেম্বর অজয় একটি পোস্ট শেয়ার করে জানিয়েছে ছবির এই মেয়েটি হাথরাস নির্মম ধর্ষণ কান্ডের নির্যাতিতা নয়। এই পোস্টটির ক্যাপশনে হিন্দি ভাষায় লেখা রয়েছে,
“এই ছবিটি, যাকে আপানরা হাথরাস ঘটনার সাথে যুক্ত করে শেয়ার করছেন, আসলে আমার বোনের ছবি। ২০১৮ সালে চণ্ডীগড়ের একটি হাসাপাতালে তার মৃত্যু হয়। ডাক্তারদের অবহেলার কারনে আমার বোনের মৃত্যু হওয়া সত্যেও পুলিশ এফআইআর লিখতে রাজি হয়নি তাই আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিটিকে নিয়ে একটি ক্যাম্পেন করেছিলাম। চণ্ডীগড়ে এখনও এই কেসটি চলছে। সবাইকে অনুরোধ করছি দয়া করে এই ছবিটি শেয়ার করবেন না।“

অজয়ের প্রোফাইল ঘুরে তার বোনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অনেকগুলি পোস্ট দেখতে পাই। ওই সময়ের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারি, অজয়ের বোনকে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পেট ব্যাথা নিয়ে চণ্ডীগড়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার সার্জারি করা হয়। সার্জারির তিন দিন পরেই তার মৃত্যু হয়।
মৃতার পরিবার অভিযোগ জানায়, ডাক্তারদের অবহেলার জন্যই তাদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা ধর্নায়ও বসে।
২০১৮ সালের ২৪ জুলাইয়ের একতি পোস্টে অজয় তার বোনের শেষকৃত্যের একটি ছবি পোস্ট করে। এই পোস্টেই সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া গোলাপি পোশাক পরা ছবিটি দেখতে পাওয়া যায়।

আমরা অজয় যাদবের সাথে যোগাযোগ করেছি। তার উত্তর পাওয়ার পর প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে।
অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যম ‘Aaj Tak’ হাথরাস ঘটনার নির্যাতিতার দাদার সাথে যোগাযোগ করেছে। তিনি জানিয়েছেন এটি তার বোনের ছবি নয়।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। চণ্ডীগড়ের অন্য একটি মেয়ের ছবিকে হাথরাস নির্মম ধর্ষণ কান্ডের নির্যাতিতার ছবি বলে শেয়ার করা হচ্ছে।