সম্প্রতি কানাডায় শিখ নেতাকে হত্যার ঘটনায় ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কানাডা ভারতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে অভিযোগ করেছে ভারত একজন কাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসীকে কানাডার মাটিতে অবৈধভাবে হত্যা করেছে। এরপর উভয় দেশই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করে। এই প্রসঙ্গে একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, কানাডায় আরএসএস সংগঠন নিষিদ্ধ করা হল। ১;০২ মিনিটের এই ভিডিওতে এক ব্যাক্তি নিজেকে NCCM-এর প্রতিনিধি হিসেবে বলে কানাডা সরকারের কাছে ৪টি দাবি রাখতে শোনা যাচ্ছে। দাবি গুলো হল- ১, অবিলম্বে কানাডার রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাহার, ২. কানাডায় ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করুন, ৩. ভারতের সাথে বাণিজ্য আলোচনার সমস্ত আলোচনা বন্ধ করুন, ৪. কানাডায় আরএসএস সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা এবং দেশ থেকে এর সমস্ত এজেন্টদের বহিষ্কার করা।

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। কানাডা সরকার আরএসএস সংগঠনকে দেশে নিষিদ্ধ করেনি। ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যাক্তি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর কানাডিয়ান মুসলিম সংগঠনের সিইও, কানাডা সরকারের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই।

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাইঃ

ভিডিওর সত্যতা যাচাই প্রক্রিয়া আমরা ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে শুরু করি। ফলে, ভাইরাল ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণটি ‘NCCMtv’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে পেয়ে যায়। ২০ সেপ্তেম্বর.২০২৩, তারিখে আপলোড করা এই ভিডিওর শিরোনামে লেখা হয়েছে,” NCCM সিইও স্টিফেন ব্রাউন কানাডায় শিখ ব্যক্তির কথিত হত্যার প্রতিক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।“

ইমিগ্রেশন নিউজ কানাডার অফিশিয়াল টুইটার প্রোফাইল থেকে করা একটি পাওয়া যায় যেখানে স্টিফেন ব্রাউন মিডিয়াকে সম্বোধন করে একই দাবি করছেন৷

উপরোক্ত তথ্য মাথায় রেখে গুগল সার্চের মাধ্যমে জানতে পারি, NCCM এর পুরো নাম- National Council of Canadian Muslims (কানাডিয়ান মুসলিমদের জন্য জাতীয় কাউন্সিল)। NCCM "একটি স্বাধীন এবং অলাভজনক সংস্থা যা কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের হিতে কাজ করে। সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে এটি কানাডিয়ান সরকারের সাথে কোনো সম্পর্কযুক্ত নয়। স্টিফেন ব্রাউন কোনো সরকারি কর্মকর্তা নন। তার মন্তব্য কানাডা সরকারের মন্তব্য বা নির্দেশনা হতে পারে না।

কানাডায় আরএসএস সংগঠন নিষিদ্ধ ?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এরকম কোন কানাডিয়ান গণমাধ্যম বা কোন অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পাইনা যেখানে এই কথাকে সিদ্ধ করে। কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিচালনাকারী গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স, কানাডা-এর অফিশিয়াল সাইটও তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখি। এখানেও কানাডায় আরএসএস-এর উপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কোন তথ্য পাওয়া যায়না।

১৯ সেপ্তেম্বর,২০২৩, তারিখের আল জাজিরার প্রতিবেদন যার শিরোনামে লেখা হয়েছিল,” শিখ, মুসলিম নেতারা কানাডায় শিখ নেতার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।“ এখানে ব্যবহৃত ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ডে স্টিফেন ব্রাউনকে লক্ষণীয়। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়ো। কানাডা সরকার আরএসএস সংগঠনকে দেশে নিষিদ্ধ করেনি। ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যাক্তি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর কানাডিয়ান মুসলিম সংগঠনের সিইও, কানাডা সরকারের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই।

Avatar

Title:কানাডায় আরএসএস সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো ? জানুন ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা

Written By: Nasim Akhtar

Result: False