
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কর্ণাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ভিড় হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে এবং পুলিশ বিক্ষোভ সভা ভাঙার উদেশ্যে তাদের রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছেঃ ____ইন্নালিল্লাহ…😭 “হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণহারে “গ্রেফতার করছে পুলিশ..🥺 হে আল্লাহ……….. !! আমার মুসলিম ভাই-বোনদের জালিমের জুলুম থেকে রক্ষা করুন। আমীন। #আল্লাহু_আকবার।
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ২০২১ সালে বেঙ্গালুরু শহরে জাতীয় শিক্ষানীতির (NEP) বিরুদ্ধে প্রদর্শনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করার ভিডিওকে সম্প্রতির হিজাব-বিতর্কের দৃশ্য দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে কর্ণাটকে উদুপির একটি সরকারি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে আসা ছাত্রীদের কলেজ চত্বরের বাইরে চলে যেতে বলা হয়। এই ঘটনার পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় হিজাব-বিতর্ক। দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি হিজাব পরে ছাত্রীদের ক্লাসে আসার বিরোধিতা করতে শুরু করে। কর্ণাটকের ম্যান্ডার পিইএস কলেজে একজন ছাত্রী কলেজে আসার পথ তাকে হেনস্থা করতে শুরু করে দক্ষিণপন্থী ছাত্রের একটি দল। মেয়েটিকে দেখে তারা ‘জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম’ চিৎকার করতে থাকে। উত্তরে মেয়েটি ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান তোলে। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর হিজাব-বিতর্কের মুখ হয়ে যায় মুসকান হিজাব পরিহিত এই কলেজ ছাত্রী। বিস্তারিত…।
হিজাব বিতর্ক নিয়ে কর্ণাটক হাই কোর্ট জানিয়েছে, যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিফর্ম নির্ধারিত করা আছে সেখানে হিজাব বা উত্তরীয়, কোনরকম ধর্মীয় পোশাক পরে যাওয়া যাবে না। পড়ুন বিস্তারিত।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বাংলা এর আগে হিজাব-বিতর্ক নিয়ে ছড়ানো বেশ কয়েকটি ভুয়ো খবরের তথ্য যাচাই করে সেটিকে ভুয়ো প্রমাণ করে। ফ্যাক্ট চেকগুলি পড়ুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
তথ্য যাচাই
এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কয়েকটি কিফ্রেমে ভেঙ্গে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, সংবাদমাধ্যম ‘সাহিল অনলাইন টিভি নিউজ’ এর ইউটিউবে চ্যানেলে এই ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে আপলোড করা এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “বেঙ্গালুরু: জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে।” ভিডিওর ২ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অংশকে ভুয়ো দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।
নিচে ভাইরাল ভিডিও এবং আসল ভিডিওর একটি তুলনামূলক ছবি দেওয়া হল।

সংবাদমাধ্যম ‘দি কগনেট’-এর ইউটিউব চ্যানেলেও এই ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণটি দেখতে পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখে আপলোড করা এই ভিডিওর শিরোনামে লেখা রয়েছে, “বেঙ্গালুরুতে জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত ছাত্রদের লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।” ভিডিও প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষানীতি (২০২০) এর বিরুদ্ধে কর্ণাটকের ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার শিক্ষার্থীরা বেঙ্গালুরু শহরের মহীশূর ব্যাঙ্ক সার্কেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। প্রদর্শনকারীরা মহীশূর ব্যাঙ্ক সার্কেলে ব্যারিকেড ভেঙে বিধান সৌধের দিকে মিছিল করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় ৩০০ জন ছাত্র এই বিক্ষোভ প্রদর্শনে অংশগ্রহণ করে।

সংবাদমাধ্যম ‘এনডি টিভি’-এর অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে এই বিক্ষোভ সম্পর্কিত ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তারিখের একটি টুইট খুঁজে পাই। টুইটের মাধ্যমে জানানো হয়, কর্ণাটক ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া-এর ছাত্ররা জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু শহরের বিধান সৌধের দিকে মিছিল শুরু করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ছাত্রদের আটক করে।
তথ্য প্রমানের সাপেক্ষে স্পষ্ট হয়ে যায়, ভাইরাল ভিডিওর হিজাব বিতর্কের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই। এটি ২০২১ সালে জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রদর্শনরত ছাত্রদের পুরনো ভিডিও।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০২১ সালে বেঙ্গালুরু শহরে জাতীয় শিক্ষানীতির (NEP) বিরুদ্ধে প্রদর্শনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করার ভিডিওকে সম্প্রতির হিজাব-বিতর্কের দৃশ্য দাবি করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রদর্শনের পুরনো ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট শেয়ার
Fact Check By: Nasim AResult: False