না, ইসলামিয়া হাসপাতালের কোভিড ইউনিট শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য নয়
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কলকাতার ইসলামিয়া হাসপাতালে শুধুমাত্র মুসলিম ধর্মালম্বীদের চিকিৎসা করা হবে। পোস্টে মোট দুটি ছবি রয়েছে যার মধ্যে একটিতে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ফিরাহাদ হাকিম ফিতে কাটছেন এবং অন্যটিতে চিকিৎসার কিছু যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ছবি দুটির নিচে লেখা রয়েছে “ইসলামিয়া হাসপাতাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ফিরহাদ হাকিম”। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “হাসপাতাল। তাও আবার শুধু মুসলিমদের জন্য!! রোগীদের ক্ষেত্রেও ভেদাভেদ-হিন্দু রোগী-মুসলমান রোগী!! শুধু মুসলমানদের জন্য যখন হাসপাতাল তখন সমস্ত ডাক্তারও কিন্তু মুসলমানই হওয়া চায়। #CommunalTMC।“
উল্লেখ্য, ৩০ মে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সেন্ট্রাল কলকাতার বৌবাজারের ইসলামিয়া হাসাপাতালে নতুন কোভিড ইউনিটের উদ্বোধন করেন। নতুন এই হাসপাতাল ভবনে থাকছে আলাদা কোভিড ইউনিট। এই ইউনিটে মোট ১১০টি বেড রাখা হয়েছে। যার মধ্যে আইসিইউ-এর জন্য আলাদা করে রাখা হয়েছে ৫০টি বেড। অক্সিজেন সমস্যা মেটাতে পুরো হাসপাতালে পাইপ লাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। থাকছে বাইপ্যাপের ব্যবস্থাও। আপাতত ৫০টি বাইপ্যাপ মেশিন দিয়ে চালু করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি ভাইরাল দাবিটি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। ইসলামিয়া হাসপাতালে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার চিকিৎসা করা হবে।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার প্রত্রিকা’র একটি প্রতিবেদনে প্রথম ভাইরাল পোস্টটির ছবি দেখতে পাই। এই খবরের স্ক্রিনশটকেই ভুয়ো ক্যাপশন দিয়ে সাম্প্রদায়িক রং লাগিয়ে ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। ৩০ মে’র এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, “কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিয়ের উপর অবস্থিত দীর্ঘ দিনের পুরনো ইসলামিয়া হাসপাতাল। ওই হাসপাতালের ভবনটির বেহাল অবস্থার কারণে সেটি ভেঙে ফেলা হয়। ফলে বেশ কয়েক বছর চিকিৎসাও বন্ধ ছিল সেখানে। সম্প্রতি ওই স্থানেই নতুন একটি ভবন তৈরি করা হয়।“
এরপর সংবাদমাধ্যম ‘এবিপি আনন্দ’র একটি ভিডিও প্রতিবেদনে এই হাসাপাতাল উদ্বোধনের খবর দেখতে পাই। ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আজকে ইসলামিয়া হাসপাতালের যে কোভিড ইউনিট সেই কোভিড ইউনিটটা আজকে আমরা চালু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই কোভিড ইউনিটে ১১০টা বেড থাকবে, এইচসিইউ ও আইসিইউ ১৫টা বেড আলাদা করে থাকবে, ৫০টা বেডে বাইপ্যাক মেশিন থাকবে। জেনারেল বেড ৪৫টা থাকবে। কোভিড ট্রিটমেন্টের আমাদের অভিজ্ঞতা নেই তাই চ্যারিং ক্রস নারসিং হোমকে আমরা আমাদের সহযোগিতা করার জন্যে এদের সাথে নিলাম।“
সংবাদমাধ্যম ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি ১৯২৬ সালে ইসলামিয়া হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরিকাঠামোগত সমস্যার কারনে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত পাঁচ বছর ধরে সেই যায়গায় একটু নতুন ভবন তৈরি করা হচ্ছিল।
এরপর আমরা রেড ভলিন্টিয়ার দীপ গুহ’র সাথে যোগাযোগ করি। তিনি খোঁজ নিয়ে আমাদের স্পষ্ট করে বলেন, “এই দাবি ভুয়ো। বাকি হাসপাতালগুলির মতো সেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের চিকিৎসা করা হবে।“
তার কাছ থেকে সূত্র নিয়ে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো ইসলামিয়া হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করে। কতৃপক্ষের তরফে আমাদের জানানো হয়, “নবনির্মিত ইসলামিয়া হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে সমস্ত রোগীদের ভর্তি নেওয়া হবে। মুসলিম বা এজাতীয় কোনও ব্যাপার নেই।“
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। ইসলামিয়া হাসপাতালে কোভিড কেয়ার ইউনিটে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হবে।
Title:না, ইসলামিয়া হাসপাতালের কোভিড ইউনিট শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য নয়
Fact Check By: Rahul AResult: False