
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পুরনো ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রচারের সময় হিন্দুরা বিক্ষোভ করায় ভয়ে দৌড় দেন আসানসোল দক্ষিনের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সায়নী ঘোষ একটি সাদা শাড়ী পরে দৌড়াচ্ছেন। তার পেছনে অনেকগুলো লোক তার পেছনে ছুটছে। পোস্টের ক্যাপশনে হিন্দি ভাষায় লেখা রয়েছে, “তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ যিনি শিবের মাথায় কন্ডোম পরানো ছবি পোস্ট করেছিলেন, তিনি যখন হিন্দু এলাকায় প্রচার করতে যান তখন তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়”।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। প্রচারের সময়ে সায়নীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। তাকে ঘিরে অনেকজন লোক দাড়িয়ে যায় এবং তিনি সুরক্ষিত অনুভব না করায় সেখান থেকে দৌড়ে তিনি ৫০ মিটার এগিয়ে যান।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, প্রায় বছর পাঁচেক আগে সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইটটি করা হয়েছিল। টুইটে দেখা গিয়েছিল, শিবলিঙ্গের মাথায় কন্ডোম পরাচ্ছে এইডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’। ছবিতে লেখা ছিল ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। আর পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, “এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর।” অভিনেত্রী আগেই দাবি করেছিলেন, ২০১৫ সালে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। সেই সময় এই ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে। পরে যখন বিষয়টি তাঁর নজরে আসে তখন তিনি টুইটটি ডিলিট করেন। কিন্তু কিছুদিন আগে টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে বিজেপি নেতা তথাগত রায় আবার ‘কন্ডোম’ প্রসঙ্গ তুলে সায়নীর সমালোচনা করেছিলেন।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, সংবাদমাধ্যম ‘ইটিভি ভারতে ফেসবুক পেজে একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, নির্বাচনী প্রচারের সময় অনেক সমর্থকরা তাকে ঘিরে ফেলে ফলে সুরক্ষিত অনুভব না করায় তিনি দৌড়ে এগিয়ে যান।
এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘এবিপি আনন্দ’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, বিবার আসানসোলের বার্নপুর এলাকায় প্রচারের জন্য গিয়েছিলেন সায়নী ঘোষ। বাজনা বাজিয়ে মিছিল করে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার সারছিলেন অভিনেত্রী। হাসিমুখে কথা বলা, অনুরাগীদের আবদার মেটাতে তাঁদের সঙ্গে সেলফি তোলা সবই চলছিল। তবে তার মাঝেই ঘটল ছন্দপতন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে খানিক গোলযোগের পরই তৃণমূলের তারকা প্রার্থীকে দেখা যায় শাড়ির কুঁচি ধরে দৌড় লাগাতে। প্রায় ৫০ মিটার ওইরকমভাবেই ছোটেন তিনি। আসলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মিছিলে থাকা অনেকেই অভিনেত্রীর গা ঘেঁষে ভীড় জমাতে শুরু করেন, আর তাতেই বেজায় আপত্তি জানান সায়নী ঘোষ। এরপরই তাঁকে দেখা যায় মিছিলের ভীড় থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে হাঁটতে। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীর নির্দেশেই নিরপত্তারক্ষীরা বলয় তৈরি করেন।

এরপর আমরা ইটিভি ভারতের সাংবাদিক শাশ্বতী মজুমদারের যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল হওয়া খবরটি একবারেই ভুয়ো। হিন্দুরা তাড়িয়ে দেয়নি আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষকে। তার আশে পাশে অনেক লোক জড়ো হয়ে যাওয়ায় তিনি সুরক্ষিত অনুভব না করায় দৌড়ে এগিয়ে যায়।“
এরপর সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর একটি ফেসবুক ভিডিওতে এই খবরটি দেখতে পাই।
এরপর সংবাদ প্রতিদিনের ডিজিটাল মিডিয়ার প্রধান শ্রীমতি চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ কপরি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই। সুরক্ষিত অনুভব না করাতেই দৌড়ে এগিয়ে যান সায়নী ঘোষ। তার পাশে লোকের লোকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পরে যান তিনি। এরপর তার নিরাপত্তারক্ষীরা তার চারিদিকে একটি বলয় তৈরি করে।“
এরপর আমরা হীরাপুর পুলিশে স্টেশনের এসএইচও রাহুল কুমার দেব-এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, “সায়নী ঘোষের প্রচার যাত্রা বার্নপুরে খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়। সেখানে কোনরকম ঝামেলা বা বচসা হয়নি। স্পষ্টভাবেই বলা যেতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া দাবিটি ভুল।“
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। প্রচারের সময়ে সায়নীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। তাকে ঘিরে অনেকজন লোক দাড়িয়ে যায় এবং তিনি সুরক্ষিত অনুভব না করায় সেখান থেকে দৌড়ে তিনি ৫০ মিটার এগিয়ে যান।