
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, হিজাব পরিহিত মুসলিম মেয়েদের ওপর জল ছোঁড়া হচ্ছে। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বোরখা পরিহিত কয়েকজন মেয়ে রাস্তার ওপর দিয়ে দৌড়ছে এবং রাস্তার পাশ থেকে কয়েকজন যুবক তাদের ওপর জল ছুঁড়ছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছেঃ ভারতে মুসলিম বোনদের ওপর,,,, এ ভাবে অত্যাচার মেনে নেয়া যায় না,, তারা #হিজাব পরিহিত মেয়েদের দেখলেই এভাবে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে,,, ভারতীয় ক্ষমতাসিন বিজেপির জঙ্গি রা,,, তিব্র নিন্দা জানায়,,, আল্লাহ আপনি এদের কঠিন পরিনতি দান কর,,, আমিন #hijab #ALLAHHUAKBAR #islam #collected।”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র-জুনিয়রদের জল ছোঁড়ার ক্যাম্পাস প্রথার ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কর্ণাটকে উদুপির একটি সরকারি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে আসা ছাত্রীদের কলেজ চত্বরের বাইরে চলে যেতে বলা হয়। এই ঘটনার পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় হিজাব-বিতর্ক। দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি হিজাব পরে ছাত্রীদের ক্লাসে আসার বিরোধিতা করতে শুরু করে। কর্ণাটকের ম্যান্ডার পিইএস কলেজে একজন ছাত্রী কলেজে আসার পথ তাকে হেনস্থা করতে শুরু করে দক্ষিণপন্থী ছাত্রের একটি দল। মেয়েটিকে দেখে তারা ‘জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম’ চিৎকার করতে থাকে। উত্তরে মেয়েটি ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান তোলে। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর হিজাব-বিতর্কের মুখ হয়ে যায় মুসকান হিজাব পরিহিত এই কলেজ ছাত্রী। বিস্তারিত…।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বাংলা এর আগে হিজাব-বিতর্ক নিয়ে ছড়ানো বেশ কয়েকটি ভুয়ো খবরের তথ্য যাচাই করে সেগুলিকে ভুয়ো প্রমাণ করে। ফ্যাক্ট চেকগুলি পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
তথ্য যাচাই
এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ইনভিড টুলের মাধ্যমে কি ফ্রেমে ভেঙ্গে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ‘পুথিথু’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিওর অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে আপলোড করা এই ভিডিওর শিরোনামে লেখা রয়েছে, “ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে প্যারোডি – মহিলা ছাত্রদের হয়রানি।”
উপরের ভিডিও থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় এটি পুরনো ভিডিও এবং এর সাথে হিজাব বিতর্কের কোনও সম্পর্ক নেই। এরপর এই সুত্র ধরে গুগলে ‘ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’ শব্দ ব্যবহার করে কিওয়ার্ড সার্চ করলে ‘সাউথ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’ এবং ‘ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’ নামের শ্রীলঙ্কার ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো প্রথমে সাউথ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাথে যোগাযোগ করে। ভিডিওটি দেখার পর কতৃপক্ষের তরফে আমাদের জানানো হয়, “ঘটনাটি আমাদের ক্যাম্পাসের নয়।“
এরপর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করে। ভিডিওটি দেখার পর তিনি আমাদের জানান, “এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রথাগত রীতি, যাকে বলা হয় ‘বাকেটিং’। এই রীতি অনুযায়ী সিনিয়র ছাত্ররা জুনিয়রদের দিকে জল ছুঁড়ে মারে। ঘটনাটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি/মার্চ মাসের কাছাকাছি ঘটেছিল এবং ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের নয়। জল কাছাকাছি পুকুর থেকে নেওয়া হয়। এটি একটি সাধারণ ঘটনা যা প্রতি বছর ঘটে এবং এটি ঠিক র্যাগিং নয়।”
তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে যায়, ভিডিওটি শ্রীলঙ্কার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ছাত্রদের দ্বারা তাদের জুনিয়রদের ওপর জল ছোঁড়ার ক্যাম্পাস প্রথা। এই ভিডিওর সাথে সাম্প্রতিক হিজাব-বিতর্কের কোনও সম্পর্ক নেই।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র-জুনিয়রদের জল ছোঁড়ার ক্যাম্পাস প্রথার ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।