
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে মুসলিম নারীদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। পোস্টের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হিজাব পরা একজন তরুণী রাস্তায় হাঁটছে। হঠাৎ করেই একদল যুবক তাকে আক্রমন করে। ওই তরুণীর দিকে লক্ষ্য করে আটা, ডিম এবং জল ছোঁড়া হয় এবং তার ওড়না কেড়ে তাকে দেওয়ালে ধাক্কা দেওয়া হয়।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছেঃ হে বিধর্মী সম্প্রদায়…ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম, এটা শান্তির ধর্ম তাই বাংলায় ৯৫% মুসলিম থাকা সত্ত্বেও অন্য কোন ধর্মের মানুষদের উপর নির্যাতন করে না..! ভারতে মুসলিম মেয়েদের হিজাব নিয়া যে অত্যাচার হচ্ছে, এটা দ্বারা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে জানি না,, তবে এটা তাদের জেনে রাখা উচিৎ ইসলাম নিয়া বেশি বাড়াবাড়ি করলে বিশ্ব মুসলিম মেনে নিবে না..!! তারা গর্জে উঠবে উঠবে উঠবেই ইনশাআল্লাহ..!!!”
তথ্য যাচাই করে আমরা জানতে পারি পোস্টের দাবি ভুয়ো ও বিভ্রান্তিকর। ২০১৫ সালে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরে অশুরা দিবস উদযাপনের পুরনো ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কর্ণাটকে উদুপির একটি সরকারি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে আসা ছাত্রীদের কলেজ চত্বরের বাইরে চলে যেতে বলা হয়। এই ঘটনার পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় হিজাব-বিতর্ক। দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি হিজাব পরে ছাত্রীদের ক্লাসে আসার বিরোধিতা করতে শুরু করে। কর্ণাটকের ম্যান্ডার পিইএস কলেজে একজন ছাত্রী কলেজে আসার পথ তাকে হেনস্থা করতে শুরু করে দক্ষিণপন্থী ছাত্রের একটি দল। মেয়েটিকে দেখে তারা ‘জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী রাম’ চিৎকার করতে থাকে। উত্তরে মেয়েটি ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান তোলে। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর হিজাব-বিতর্কের মুখ হয়ে যায় মুসকান হিজাব পরিহিত এই কলেজ ছাত্রী। বিস্তারিত…।
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বাংলা এর আগে হিজাব-বিতর্ক নিয়ে ছড়ানো বেশ কয়েকটি ভুয়ো খবরের তথ্য যাচাই করে সেগুলিকে ভুয়ো প্রমাণ করে। ফ্যাক্ট চেকগুলি পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
তথ্য যাচাই
এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে আমরা ভিডিওটিকে ‘ইনভিড-উই-ফেরিফাই’ টুলের মাধ্যমে কয়েকটি কি-ফ্রেমে ভেঙ্গে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, ‘ইয়েসিন জাররাম’ নামের ফেসবুক প্রোফাইলে এই ভিডিওর অনুসন্ধান পাই। ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ভাইরাল ভিডিওটি সম্প্রতির নয় এবং হিজাব বিতর্কের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও কয়েকটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম ‘মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ’-এর ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর তারিখের একটি প্রতিবেদনে এই ভিডিওটি দেখতে পাই। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিডিওটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরে অশুরা দিবস পালনের দৃশ্য। কাসাব্লাঙ্কার একটি গলি পথ দিয়ে মেয়েটি যখন যাচ্ছিল তখন কয়েকজন যুবক ডিম, আটা ও জল নিয়ে তার ওপর আক্রমন হানে। এমনকি তার চুল ধরে টেনে মেয়েটিকে হেনস্থা করা হয়। আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে ’মুহাররাম’ মাসের দশম দিনকে মরক্কোবাসীরা অশুরা দিবস হিসেবে পালন করে।

ফ্রান্সের সংবাদসংস্থা ‘ফ্রান্স২৪’-এর ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, তারিখের প্রতিবেদনেও ভাইরাল ভিডিওকে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরে অশুরা দিবস পালনের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপরোক্ত প্রমানের সাপেক্ষে স্পষ্ট হয়ে যায় ভাইরাল এই ভিডিওটির সাথে হিজাব-বিতর্কের কোনও সম্প্রর্ক নেই।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৫ সালে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরে অশুরা দিবস উদযাপনের পুরনো ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:মরক্কোতে অশুরা দিবস উদযাপনের পুরনো ভিডিওকে হিজাব-বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Rahul AResult: Missing Context